মার্চের দিনগুলি

রচনা : বুদ্ধিজীবী হত্যা

↬ স্মরণীয় যাঁরা চিরদিন

ভূমিকা : লাখো প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালে প্রায় নয় মাসব্যাপী যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। দেশবাসী আজও তাঁদের জন্য গর্ববোধ করে। 

প্রেক্ষাপট : ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাসংগ্রামের ডাক দিয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার ঘোষণা আসার ঠিক পূর্বমুহূর্তি অর্থাৎ ২৫ মার্চ গভীর রাতে ঢাকার নিরীহ মানুষের ওপর বর্বর আক্রমণ শুরু হয়। তারা প্রথম শুরু করে নির্বিচারে হত্যা; এরপর ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে একে একে হত্যা করে এ দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের। 

আমরা যাঁদের ভুলব না : আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী কারও কথাই আমরা কোনদিন ভুলতে পারব না। এদের কয়েকজন হলেন : 

অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ধর্মপ্রাণ শিক্ষক ছিলেন তিনি। পবিত্র কোরআন শরিফ পড়া অবস্থায় তাঁকে ধরে, টেনেহিঁচড়ে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। 

অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা : তিনি ইংরেজির খ্যাতিমান শিক্ষক ছিলেন। তাঁকেও হত্যা করা হয়। 

অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেব : তিনি ছিলেন নিরহংকার, সহজ-সরল ও জ্ঞানী মানুষ। নির্মমভাবে তাঁকেও হত্যা করা হয়। 

শহীদ সাবের : পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে আগুন ধরিয়ে দিলে ‘সংবাদ’ অফিসে অবস্থান করা সাবের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। 

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত : ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে তিনিই প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করেছিলেন। ৮৫ বছরের বৃদ্ধ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে তাঁর কুমিল্লার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। 

গোগেশ চন্দ্র ঘোষ : ৮৪ বছরের বৃদ্ধ গোগেশ চন্দ্র ঘোষ। জীবনের বেশির ভাগ সময় রসায়নে অধ্যাপনা করেছেন। তাঁকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। 

রণদাপ্রসাদ সাহা : ৭৮ বছর বয়সী রণদাপ্রসাদ সাহা জন্মেছিলেন পরিবের ঘরে। নিজের চেষ্টায় তিনি বড় হয়েছিলেন। এ মহান ব্যক্তিকেও মির্মমভাবে হত্যা করা হয়। 

আলতাফ মাহমুদ : তিনি ছিলেন সংগীতজ্ঞ ও সুরকার। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটির সুরকার তিনি। পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। 

উপসংহার : উল্লিখিত শহিদদের রক্তে ভিজে আছে বাংলাদেশের মাটি ও স্বজনদের চোখ। দেশের জন্য যাঁরা প্রাণ দিলেন, তাঁরা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল-সবুজ পতাকা আর একটি মানচিত্র। আমরা তাঁদের কখনো ভুলব না।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post