মার্চের দিনগুলি

গণিত : রেখা (Line) : প্রাথমিক আলোচনা

রেখা
(Line)

জ্যামিতি বিষয়ে ভালো করতে হলে আপনাকে জ্যামিতির ব্যাসিক সম্পর্কে ট্রং হতে হবে। জ্যামিতির সকল খুঁটিনাটি বিষয়বস্তু এবং পরীক্ষায় আসে এমন গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্যের সমাহার থাকছে আমাদের জ্যামিতি নিয়ে এই আয়োজনে। আমরা রেখা, কোণ, ত্রিভূজ, চর্তুভূজ ও বৃত্ত সংক্রান্ত উপপাদ্য এবং পরিমিতির সরলক্ষেত্র ও ঘনবস্তু প্রতিটা বিষয়ের উপর আলাদা আলাদা কনটেন্ট তৈরি করে আপনার কনসেপ্ট ক্লিয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। 

শুরুতে যদি আমরা বলি জ্যামিতি কি? অনেকে জানেন আবার অনেকে জানেন না! 'জ্যা' শব্দের অর্থ ভূমি আর 'মিতি' শব্দের অর্থ পরিমাপ। অর্থাৎ, গণিতের যে প্রাচীন শাখা বিভিন্ন নকশা, চিত্র কিংবা স্থানের আকার, আকৃতি ও পরিমাপ সংক্রান্ত পারস্পরিক সম্পর্ক বা তাদের আপেক্ষিক অবস্থান আলোচনা করে তাকে জ্যামিতি বলে। 

জ্যামিতির কিছু মৌলিক উপাদান আছে যার উপর ভিত্তি করে এই শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রেখা, বিন্দু, কোণ, তল এবং ঘনবস্তু ইত্যাদি হচ্ছে জ্যামিতির মৌলিক উপাদান৷ 

রেখা নিয়ে আলোচনা করতে হলে শুরুতে আমাদের বিন্দু বিষয়ে আলোকপাত করতে হবে৷ কারণ, রেখা উৎপত্তি বা শুরু হয় একটি বিন্দুর গমনের মাধ্যমে। কারণ রেখার সাধারণ ডেফিনেশনে বলা হয়েছে, 'বিন্দু চলার পথকে রেখা বলা হয়।'

বিন্দু, রেখা, রেখাংশ, বক্ররেখা, সরলরেখা, রশ্মি

বিন্দু (Point) : বিন্দু শব্দের অর্থ 'ফোটা'। জ্যামিতিতে অবস্থা আছে কিন্তু দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতা (বেধ) নেই চিহ্নকে বিন্দু বলে। বিন্দুর শুধু অবস্থান আছে কিন্তু কোনো মাত্রা নেই। বিন্দুকে শূন্য মাত্রার সত্ত্বা ধরা হয়।

রেখা (Line) : সাধারণ অর্থে বিন্দু চলার পথকে রেখা বা Line বলে। যার শুধুমাত্র দৈর্ঘ্য আছে কিন্তু প্রস্থ, উচ্চতা বা বেধ নেই তাকে রেখা বলে। রেখার কোনো শুরু বিন্দু থাকে না আর তাই একে ডানে বামে বা উভয়দিকে ইচ্ছেমত বাড়ানো বা কমানো যায়। 

রেখার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো দিয়ে একটি রেখাকে সহজেই চিনতে পারা যায়। যেমন: 

১. রেখার কোনো শুরু অথবা শেষ থাকে না। আর তাই রেখা আঁকতে হলে শুরুর স্থান এবং শেষ স্থানে তীর চিহ্ন দিতে হয়।

২. রেখা সোজা, আঁকাবাঁকা যে কোনো ধরনের হতে পারে।

৩. রেখা থেকে রেখাংশ এবং রশ্মির উৎপত্তি হয়েছে।

৪. রেখার দৈর্ঘ্য আছে কিন্তু তা নির্দিষ্ট নয় এবং রেখার কোনো প্রস্থ থাকে না। 

৫. একটি সরলরেখা কখনো নিজেকে ছেদ করতে পারে না তবে একটি বক্ররেখা যত ইচ্ছে নিজেকে ছেদ করতে পারে।

৬. একটি সরলরেখার উপর কোনো একটি বিন্দুতে যে কোণ উৎপন্ন হয় তার পরিমাপ ২ সমকোণ বা ১৮০° ডিগ্রি হয়। 

রেখার প্রকারভেদ : রেখা মূলত ২ প্রকার। যথা—
(ক) সরলরেখা (Straight line)
(খ) বক্ররেখা (Curved line) 

নিম্নে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-

(ক) সরলরেখা (Straight line) : একটি বিন্দু সেট দ্বারা সৃষ্ট সঞ্চারপথ দিক পরিবর্তন না করলে সে সঞ্চারপথকে সরলরেখা বলা হয়। অর্থাৎ, সরলরেখা একদম সোজাসুজি চলাচল করে। 

সঞ্চারপথ (Locus) : সমতলস্থ যেসব বিন্দু এক বা একাধিক প্রদত্ত শর্ত পূরণ করে, তাদের সেটকে সঞ্চারপথ বলে। প্রদত্ত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে সঞ্চারপথটি সরলরেখা বা বক্ররেখা যেকোনোটা হতে পারে। 

(খ) বক্ররেখা (Curved line) : একটি বিন্দু সেট দ্বারা সৃষ্ট সঞ্চারপথ যদি দিক পরিবর্তন করে তবে সে সঞ্চারপথকে বক্ররেখা বলা হয়। অর্থাৎ, বক্ররেখা একদম সোজাসুজি চলাচল না করে আঁকাবাকা ভাবে চলে। 

এবার আমরা রেখার কিছু ব্যবহার (Use of Line) দেখবো : 
রেখার সাহায্যে নিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের জ্যামিতিক আকার বা শেফ তৈরি করতে পারি। যেমন: সরলরেখার সাহায্যে চতুর্ভুজ, ত্রিভুজ, রম্বস, আয়তক্ষেত্র, সামান্তরিক, পঞ্চভুজ, ষড়ভুজ ইত্যাদি তৈরি করা যায়। আবার বক্ররেখার সাহায্যে বৃত্ত, অধিবৃত্ত, উপবৃত্ত  ইত্যাদি তৈরি করা যায়।

চারুকলার চিত্রকলাতেও রেখার উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হয়। শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের রেখা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ও নানা আঙ্গিকে মনোমুগ্ধকর নকশা তৈরি করেন।

এবার আমরা রেখা, রেখাংশ এবং রশ্মির মধ্যে পার্থক্য খুঁজে দেখব : 
রেখা, রেখাংশ এবং রশ্মির মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করার আগে আমরা যদি রেখা, রেখাংশ এবং রশ্মি কি জানতে পারি তবে আমরা সহজেই তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারব। আমরা জানি, বিন্দুর চলার পথকে রেখা বলে। রেখার কোনো নির্দিষ্ট শুরু বা শেষ নেই। অপরদিকে, যে রেখার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই তাকে রশ্মি বলে। আবার, কোনো রেখাংশ হচ্ছে একটি রেখার অংশ। অর্থাৎ, রেখা থেকে কোনো অংশ কেটে নিলে (বা আমরা চাইলে রশ্মি থেকেও কেটে নিতে পারি) সেই অংশকে রেখাংশ বলে। 

এখন আমরা সহজেই রেখা, রেখাংশ এবং রশ্মির মধ্যে পার্থক্য করতে পারব। যেমন: 

১. রেখার শুরু ও শেষ নাই। রশ্মির শুরু আছে কিন্তু শেষ নাই। রেখাংশের শুরু এবং শেষ উভয়ই আছে। 

২. রেখা এবং রশ্মির নিজস্ব কোনো দৈর্ঘ্য নাই তবে রেখাংশের নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য আছে। 

৩. রেখার উভয় প্রান্তে তীর চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। রশ্মির এক প্রান্তে তীর চিহ্ন ব্যবহার করা হয় এবং রেখাংশের কোনো প্রান্তেই তীর চিহ্ন ব্যবহার করা হয় না। 

৪. অনির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য বুঝাতে রেখা এবং একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে শুরু হয়ে অনির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য বুঝাতে রশ্মি আঁকা হয়। আর নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য বুঝাতে রেখাংশ আঁকা হয়। 

৫. একটি রেখাকে দ্বিখণ্ডিত করলে ২ টি রশ্মি পাওয়া যায়। একটি রশ্মিকে দ্বিখণ্ডিত করলে ১ টি রেখাংশ ও ১ টি রশ্মি পাওয়া যায়। আর একটি রেখাংশকে দ্বিখণ্ডিত করলে ২ টি নতুন রেখাংশ পাওয়া যায়। 

এখান থেকে আমরা রেখা, রেখাংশ এবং রশ্মির মধ্যে কিছু কমন মিল খুঁজে পাবো। ভেবে দেখুন আপনিও ধারণা করা পারতেছেন। চলুন এবার মিলগুলো মিলিয়ে দেখি: 

ক. রেখা, রেখাংশ এবং রশ্মি এদের কোনোটির প্রস্থ নেই। 

খ. দুটি রেখা, রেখাংশ বা রশ্মি যদি একে অপরকে ছেদ করে তবে সেখানে চারটি কোণ উৎপন্ন হয়।

গ. দুটি রেখা বা রশ্মি একে অপরকে ছেদ করার সময় যে চারটি কোণ উৎপন্ন হয়, তাদের বিপ্রতীপ কোণগুলো পরস্পর সমান হয়৷

কিছু টিপস জেনে রাখুন : 

১৷ দুইটি বিন্দুর মধ্যে দিয়ে একটি এবং কেবলমাত্র ১টি সরলরেখা আঁকা যায়।

২। দুইটি সরলরেখা একটি এবং কেবল একটি বিন্দুতে পরস্পরকে ছেদ করতে পারে।

৩। দুই বিন্দুর মধ্যে সরলরেখার দূরত্বই সবচে ক্ষুদ্রতম।

৪। যেসব বিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করে, তাদেরকে সমরেখ বিন্দু বলা হয়।

নোট ১ : একই সমতলে অবস্থিত দুটি সরলরেখা একে অপরকে ছেদ না করলে, তাদেরকে  সমান্তরাল সরলরেখা বলে। সমান্তরাল নির্দেশক চিহ্ন হিসেবে ' | | ' এই চিহ্নটিকে ব্যবহার করা হয়।

চিত্রে : AB | | CD

নোট ২ : যে সরলরেখা দুই বা ততোধিক সরলরেখাকে ছেদ করে, তাকে ছেদক বলে। 

চিত্রে : AB | | CD এবং EF তাদের ছেদক।

রেখা নিয়ে আজকের কনটেন্ট এখানেই শেষ করছি। কোনো ভুলত্রুটি থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এবং আমাদের পরবর্তী কনটেন্ট পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ব্লগে। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্যে থ্যাংকস।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post