১৯২০
বঙ্গবন্ধু ১৭ মার্চ ১৯২০ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ লুৎফর রহমান এবং শেখ সায়েরা খাতুনের ৪ কন্যা এবং ২ পুত্র সন্তানের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। মা-বাবা তাঁকে 'খোকা' বলে ডাকতেন।
১৯২৭
সাত বছর বয়সে শেখ মুজিবুর রহমান গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে তাঁর স্কুল জীবন আরম্ভ করেন। নয় বছর বয়সে তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরবর্তীকালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন।
১৯৩৪
১৪ বছর বয়সে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে তার একটি চোখ কলকাতায় অপারেশন করা হয় এবং চক্ষুরোগের কারণে তার লেখাপড়ার সাময়িক বিরতি ঘটে।
১৯৩৮
শেখ মুজিবুর রহমান ১৮ বছর বয়সে শেখ ফজিলাতুন্নেসা (রেনু)-কে বিয়ে করেন। তাঁরা দুই কন্যা (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) এবং তিন পুত্রের (শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল) জনক-জননী ছিলেন।
১৯৪২
বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন এবং ১৯৪৭ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
১৯৪৩
সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৪৬
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৭
শান্তি মিশন চলাকালীন বঙ্গবন্ধু মহাত্মা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং কলকাতায় দাঙ্গা প্রতিরোধ, অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ভারত ও পাকিস্তানের পাশাপাশি তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বতন্ত্র, স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে আন্দোলনে যোগ দেন।
১৯৪৮
৪ জানুয়ারি 'পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দি গণপরিষদে দাঁড়িয়ে "পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে অবশ্যই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে মেনে নিতে হবে" ঘোষণা করলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানান শেখ মুজিব। ২ মার্চ ফ হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ধর্মঘট পালনকালে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভরত অবস্থায় শেখ মুজিবসহ আরো অনেকে গ্রেপ্তার হন। তাঁর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজের অব্যাহত আন্দোলনের মুখে ১৫ মার্চ সরকার তাঁদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
১৯৪৯
১৯ এপ্রিল চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পক্ষে মিছিল বের করার প্রস্তুতিকালে কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থাতেই তাঁকে যুগ্মসম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
১৯৫২
জেলে বন্দি অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে নিজেকে জড়িত রেখেছিলেন এবং আন্দোলন সফল করার জন্য জেল থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পাঠাতেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি জেলের ভেতরেই টানা ১১ দিন ধরে। আমরণ অনশন চালিয়ে যান এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান। একই বছর তিনি শান্তি সম্মেলন উপলক্ষ্যে চীন সফর করেন। এবং এ সম্মেলনে বাংলায় বক্তৃতা দেন, ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে যান বৈশ্বিক অঙ্গনে।
১৯৫৩
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং একজন বাঙালি নেতা হিসেবে তাঁর উত্থান হয়।
১৯৫৪
১০ মার্চ অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে জয় লাভ করে; আওয়ামী লীগ পায় ১৪৩টি আসন। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ আসন থেকে। নির্বাচিত হন এবং ১৫ মে। নতুন প্রাদেশিক সরকারের কৃষিঋণ, সমবায় ও পল্লি উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন।
ভারত স্বাধীনতা আইন-১৯৪৭ প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। ৩০ মে বঙ্গবন্ধু করাচি থেকে ঢাকায় পদার্পণ করামাত্রই রোজার হন। ২৩ ডিসেম্বর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
১৯৫৫
সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সব ধর্মের মানুষের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দলের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ' করা হয়। ২১-২৩ অক্টোবর দলের কাউন্সিল অধিবেশনে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৬
খান আতাউর রহমানের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকারে বঙ্গবন্ধু শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাঙালির অধিকার আদায় আন্দোলনকে বেগবান করা এবং সংগঠনকে আরো সুসংহত করার উদ্দেশ্যে ৩০ মে ১৯৫৭ তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। মাত্র নয় মাস তিনি মন্ত্রী ছিলেন।
১৯৫৭
১৩-১৪ জুন ১৯৫৭ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২৪ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত তিনি সরকারি সফরে চীনে যান।
১৯৫৮
৭ অক্টোবর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করেন এবং সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেন। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে হয়রানি করা হয়। ১১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৪ মাস পরে তাঁকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় জেলগেটেই গ্রেপ্তার করা হয়।
১৯৬১
হাইকোর্ট কর্তৃক আটকাদেশ অবৈধ ঘোষণা করার পর কারাগার থেকে মুক্ত হয়েই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য উদ্যমী ছাত্রনেতাদের নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ" নামে একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৬২
৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। ২ জুন চার বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটলে ১৮ জুন বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভ করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি লাহোরে যান এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে অন্যান্য বিরোধীদলকে সাথে নিয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন করেন।
১৯৬৪
২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নং বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ অধিবেশনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থেকে আলাদা হয়ে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। ৬-৮ মার্চ কাউন্সিল সভায় মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ দলের সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রুখতে 'দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সম্মিলিত বিরোধীদল বা কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি গঠিত হয়।
১৯৬৫
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতা এবং তথাকথিত আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে মামলা দায়ের করে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তীতে হাইকোর্টের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি লাভ করেন।
১৯৬৬
বঙ্গবন্ধু ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে 'বাঙালি জাতির মুক্তি ৬ সনদ' খ্যাত ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। ১ মার্চ তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। হয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি সারা বাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন। এ সময় তিনি ৮ বার হোল্ডার হন। প্রায় তিন বছর তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন।
১৯৬৮
৩ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করে মোট ৩৫জন বাঙালির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় জেলগেট থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে আটক রাখা হয়। এ মামলার সরকারি নাম 'রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য। শেখ মুজিবুর রহমানসহ এ মামলার অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এ মামলার বিচারকার্য শুরু হয়।
১৯৬৯
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্রদের টানা গণআন্দোলনের মুখে সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি মামলার সকল বন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল ছাত্র সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করে। ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আওয়ামী লীগের এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের নাম রাখেন 'বাংলাদেশ'।
১৯৭০
ছয় দফার বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য বঙ্গবন্ধু দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। • তিনি দলের জন্য নৌকা প্রতীক বেছে নেন। ১২ নভেম্বর এক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূল এলাকায় লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটলে বঙ্গবন্ধু নির্বাচনি প্রচারণা বাতিল করে দুর্গত এলাকায় চলে যান এবং আর্ত-মানবতার প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের উদাসীনতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। ৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়। জাতীয় পরিষদের পূর্ব পাকিস্তান অংশে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে (১০টি সংরক্ষিত নারী আসনসহ) আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।
১৯৭১
১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিতের ঘোষণা দিলে সারা বাংলায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন মোড় নেয়। সারা বাংলায় হরতাল পালনসহ বঙ্গবন্ধুর কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি দাবি জানানো হয়। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। এ রকম উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নে ১৬-২৪ মার্চ পর্যন্ত দফায় দফায় এই আলোচনা চলতে থাকে কিন্তু কোনো ফলপ্রসূ সমাধান আসেনি। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে নিরীহ বাঙালির ওপর পাকবাহিনী প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পরপর পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় এবং গণপরিষদ কর্তৃক শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে (বর্তমান মুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে পাকিস্তান জেলে বঙ্গবন্ধুর গোপন বিচার করে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ ও বিশ্বের মুক্তিকামী জনতা বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা দাবি করে। ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়।
১৯৭২
৮ জানুয়ারি পাকিস্তানে মুক্ত হয়ে শেখ মুজিব ঢাকার উদ্দেশ্যে লন্ডন যাত্রা করেন। ৯ জানুয়ারি তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সাথে দেখা করেন। লন্ডন থেকে ঢাকা আসার পথে বঙ্গবন্ধু দিল্লিতে যাত্রা বিরতি করেন বিমানবন্দরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি. ভি. গিরি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান।১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসেন। সেদিন বাঙালি জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা জানায়। লক্ষ জনতার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্নাত হয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ১২ জানুয়ারি যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে বাংলাদেশকে শক্ত ভিত্তির উপর স্থাপন করেন। এক কোটি বাঙালি শরণার্থীর পুনর্বাসন, স্বাধীনের তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে ফেরত পাঠানো, দশ মাসের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রের জন্য সংবিধান প্রণয়ন, একশটিরও বেশি রাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায়, জাতিসংঘ, ন্যাম OIC-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ ইত্যাদি ছিল শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
১৯৭৩
৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। ২৩ মে বিশ্ব শান্তিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ 'জুলিও কুরি' পুরষ্কারে ভূষিত হন। ৬ সেপ্টেম্বর তিনি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আলজেরিয়া যান।
১৯৭৪
২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতি দানের পরদিন ওআইসি'র শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গমন করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়ে ১৩৬তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। ২৫ জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ পরিষদের সভায় বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো বাংলায় বক্তব্য রাখেন।
১৯৭৫
১৫ আগস্ট ভোরে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নিজ বাসভবনে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী ও উচ্চাভিলাষী বিশ্বাসঘাতক অফিসারদের হাতে সপরিবারে নিহত হন। বিদেশে অবস্থান করায় বেঁচে যান তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেষ রেহানা। বাঙালি জাতির ইতিহাসে অন্ধকারতম দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।