মার্চের দিনগুলি

প্রতিবেদন : শীর্তাত মানুষদের দুঃসহ জীবন

‘শীর্তাত মানুষদের দুঃসহ জীবন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন রচনা কর।

শীর্তাত মানুষদের দুঃসহ জীবন

বাংলাদেশ ছয় ঋতুর অন্যতম ঋতু শীত। কাজেই বাংলাদেশে প্রতি বছরই কম বেশী শীত পড়ে। দু-তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। কখনো মৃদু, কখনো মাঝারি। তবে মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ে উত্তরাঞ্চলে শীত অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। বিশেষ করে হিমালয় নিকটবর্তী সীমান্তের জেলা পঞ্চগড়ে বেশি শীত পড়ে।

শীতকালের প্রথম থেকেই এবারও পঞ্চগড়ে বেশি শীত পড়েছে। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে থাকে,সামান্য দূরের রাস্তাঘাট,ঘরবাড়ি কিছুই দেখা যায় না। সঙ্গে থাকে কনকনে ঠান্ডা উত্তরে বাতাস,একেবারে হাড়ের ভেতরটা ছুঁয়ে যায়। শিশু আর বৃদ্ধরা ঘরের মধ্যেই শীতে কাঁপে। দাঁতের সঙ্গে দাঁত লেগে ঠকঠক করে,হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। মাটির পাত্র তুষ জ্বালিয়ে চারপাশে ঘিরে আগুন পোহায় বাড়ির লোকেরা। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায়-

সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে
একটুকরো কাপড়ে কান ঢেকে
কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই।

এখানকার অবস্থা এ বর্ণনার চেয়েও করুণ। কেননা এ এলাকায় অধিকাংশ মানুষ নিম্ন মধ্যবিত্ত অথবা নিম্নবিত্ত। তাদের গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই। ঘরের বাইরে বেরিয়ে কাজ না করলে দুবেলা আহার জোটে না। গত দুদিন হালকা বরফ বৃষ্টি হওয়ায় তাপমাত্রা আরও এক ধাপ নিচে নেমে গেছে। সীমান্তের কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেল, ছালা -কাঁথা জড়িয়ে বহু কষ্টে শীত প্রতিরোধের চেষ্টা করছে লোকজন। অনেক বাড়িতেই রান্না বান্না কিছু হচ্ছে না। কদিন ধরে সূর্যের আলোর দেখা পাচ্ছে না কেউ। অথচ স্রষ্টার কাছে মনে মন্ব প্রার্থনা করছে- ‘উত্তাপ আর আলো দিও’ আমাদের। ‘এক টুকরো রোদ্দুরের’ জন্য অপেক্ষা তাদের, না হলে তো বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে যাবে।

প্রচন্ড শীতে ইতোমধ্যে ৫ জন শিশু ও ৬ জন বৃদ্ধ মারা গেছেন। জেলা প্রশাসন থেকে খাদ্য ও নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বিচ্ছিন্নভাবে কম্বল ও কাপড় চোপড় বিতরণ করছে। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাস খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী পরিবহন ও বিতরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এলাকার সংসদ সদস্য, ধনী ও শিল্পপতিদের এ ব্যাপারব কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না।

কয়েক বছর ধরে এলাকায় শীত বাড়ছে। এ জন্য শীত পড়ার শুরু থেকেই সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ কমানোর ব্যবস্থা গ্রহন করা অত্যাবশ্যক। তাহলেই শীতার্ত মানুষ তাদের দুঃসহ জীবন থেকে মুক্তি পেতে পারব।

প্রতিবেদক
আরমান রায়হান
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post