ভাষণ : পড়ার অভ্যাস গঠন

পড়ার অভ্যাস গঠন’ বিষয়ে আলোচনাচক্রে প্রধান অতিথির একটি ভাষণ তৈরি কর।


পড়ার অভ্যাস গঠন বিষয়ক আলোচনা সভা

শ্রদ্ধেয় সভাপতি, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ,
সুধীমণ্ডলী, বই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক। আর বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। প্রতিটি মানুষ একটা ভালো বই পড়ে উপকার পাবেই। আজ নিজেদের চেষ্টায় আমরা বই সংগ্রহ করেছি, চেষ্টা করেছি আমাদের গড়া পাঠাগারকে আরও সমৃদ্ধি সাধন করতে। আমাদের লক্ষ্য বই পড়াকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। এমন একটি মহৎ কাজকে আপনারা যারা সহযোগিতা করে আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছেন তাঁদের সবাইকে জানাই অন্তরের অন্তস্তল থেকে সশ্রদ্ধ সালাম ও কৃতজ্ঞতা।

বই মানবসভ্যতার এক বিশাল জ্ঞানের ভাণ্ডারের ধারক। যুগের পর যুগ মানুষের সাধনা আর একাগ্রতার বিনিময়ে সমৃদ্ধ হয়েছে গ্রন্থভাণ্ডার। মানুষ তার অর্জিত জ্ঞান আর অভিমতকে লিপিবদ্ধ করেছে বইয়ের পাতায় পাতায়। সেই সাথে জ্ঞানের জগৎকে সমৃদ্ধ করে সাজিয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।

বই শুধু অভিজ্ঞতাকেই বহন করে না, সাথে সাথে নব নব সাহিত্যরসেও মানুষকে সিক্ত করে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহুমুখী আবিষ্কার, বিভিন্ন সভ্যতার বর্ণনা আর ইতিহাসের সব সুখ-দুঃখের স্মৃতিকেও বহন করে বই। বই জীবনের কথা বলে। বইয়ের বৈচিত্র্যময়তায় পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষ অন্য প্রান্তের মানুষের স্বপ্নের সাক্ষী হয়, তাঁদের জীবনবোধ, ভৌগোলিক অবস্থা অথবা সাহিত্য কৃষ্টির সাথে নিজেকে পরিচিত করে তোলে। বই প্রতিটি অনুসরণীয় ব্যক্তির চিন্তা আর দর্শনের সাথে আমাদের দর্শনের সামঞ্জস্য এনে দেয়।

নিজেকে পৃথিবীর সাথে মানানসই করে গড়ে তুলতে হলে পৃথিবী সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা চাই, যা দিতে পারে বই। জাতীয় জীবনকে প্রকৃতপক্ষে ঐশ্বর্যশালী করতে হলে সাহিত্যকে সমৃদ্ধিশালী করতে হয়। তার জন্যও প্রয়োজন বই। নিয়মিত খেলাধুলা ও পুষ্টিকর খাবার হয়তো দেহের বৃদ্ধি সাধন করে কিন্তু বই মন ও মননের পুষ্টি জোগায়। বর্তমানে কেবল পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক শিক্ষায় আমাদের ডিগ্রিধারীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত ও জ্ঞানীর সংখ্যা তেমন বাড়ছে না।

এ ধরনের পরিস্থিতির জন্যে সুযোগের অপ্রতুলতা বহুলাংশে দায়ী। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সুযোগ তৈরিতে তেমন উদ্যোগও নেই। বই বিতরণ, বইয়ের সহজলভ্যতা, ব্যাপক প্রচার অবশ্যই প্রয়োজনীয়। আর বইয়ের সংগ্রহশালা গ্রন্থাগারের সহায়তা বই পাঠের আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে পারে সর্বত্র। ব্যক্তিগতভাবে বই কিনে পড়া সবার পক্ষে সম্ভবপর নয়। তাই সর্বসাধারণের হাতের কাছে বই পৌঁছে দেওয়ার সুন্দর ব্যবস্থা করা একান্ত জরুরি।

প্রিয় সুধী,
পৃথিবীতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে বইয়ের বিকল্প অনেক কিছু বের হলেও বই আমাদের এখনও সবচেয়ে সহজলভ্য। জীবনকে সুন্দর আর অর্থবহ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বইয়ের প্রভাব অনস্বীকার্য। বিচিত্র মনের আকাঙ্ক্ষা মিটিয়ে আকর্ষণীয় বিকাশে বই হতে পারে প্রধান সহায়ক। বই পড়া আন্দোলন গড়ে তোলা ও পাঠ্য তৃষ্ণা মেটাতে এ গ্রন্থাগারকে দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা রেখে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post