ভাষণ : নৈতিক অবক্ষয়. উন্নয়নের অন্তরায়

‘নৈতিক অবক্ষয় উন্নয়নের অন্তরায়’ শিরোনামে একটি ভাষণ তৈরি কর।

অথবা, ‘নৈতিক অবক্ষয় উন্নয়নের অন্তরায়’ শিরোনামে প্রধান অতিথির একটি ভাষণ তৈরি কর।

‘নৈতিক অবক্ষয়, উন্নয়নের অন্তরায়’ শীর্ষক আলোচনা

শ্রদ্ধেয় সভাপতি,
মাননীয় প্রধান অতিথি, সম্মানিত বিশেষ অতিথি, বিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ ও সুধীমণ্ডলী আসসালামু আলাইকুম ।

মানুষের মানবিক গুণগুলোর মধ্যে নৈতিক গুণাবলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মানুষের নৈতিক বোধের সঙ্গে মানবিক গুণাবলি বিশেষভাবে সম্পর্কিত। প্রত্যেকটি মানুষই সুনির্দিষ্ট নীতি-আদর্শ মেনে চলে, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। যার প্রতিফলন ঘটে সমাজে ও রাষ্ট্রে। গঠনমূলক অর্থাৎ ইতিবাচক নীতিবোধ নিজের ব্যক্তিত্ব গঠনে যেমন সহায়ক, তেমনি কল্যাণকর সমাজ তথা রাষ্ট্র গঠনেও সহায়ক।

আমাদের দেশে বরাবরই নীতি ও নৈতিকতাবোধ ছিল প্রবল। যে কারণে সমাজে কোথাও কোনো দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ বা কোনো অন্যায় আবদারের চর্চা ছিল না। মানুষ অন্যায়কে এড়িয়ে চলত। কিন্তু ইদানীং এ নেতিবাচক বিষয়গুলোর চর্চা এমন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে যে, মানবিক গুণাবলি যেন জিম্মি হয়ে গেছে। সরকারি তো বটেই, বেসরকারি পর্যায়েও এগুলো মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ফলে সৎ মানুষ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে আর ভালো মানুষ শুধু বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে। মেধাবীরা হচ্ছে অবহেলিত আর মেধাহীনরা হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত। তাদের প্রতিবাদ, তাদের লেখালেখি কোনো কাজে লাগছে না।

নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে মানুষের মধ্যকার সহযোগিতা, সহানুভূতিবোধ ক্রমশ লোপ পাচ্ছে। সেখানে জেগে উঠছে লোভ, লালসা, স্বার্থপরতা এবং পরস্ব গ্রাস করার জঘন্য প্রবণতা। ফলে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরে সন্ত্রাসী মনোভাব, উগ্র-উদ্ধত মনোভাব বেড়ে গিয়ে সুখ-শান্তি, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। কেননা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো জোর করে কেড়ে নিচ্ছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজরা। অসহায় ঠিকাদাররা তাদের কথামতো চাঁদা বা ভাগ দিয়ে কাজ করছে। এতে কাজের গতি মন্থর হচ্ছে, কাজের মান খারাপ হচ্ছে। অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় কোনো কোনো কাজ পড়ে থাকছে দীর্ঘদিন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে অনিয়ম জেঁকে বসেছে। আমরা আমাদের নৈতিকতা ধরে রাখতে পারলে কোনো অনিয়ম হতো না। সঠিক ব্যক্তিরা সঠিক কাজ পেত এবং উন্নয়নকর্মের মান ভালো হতো। যার ফল ভোগ করত জনগণ, দেশ ক্রমশ উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা তা ধরে রাখতে পারিনি। শিক্ষাঙ্গনে দলবাজি, রাজনৈতিক প্রভাব, শিক্ষকদের মধ্যে অনৈক্য ও শিক্ষাদানে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছে, তাদের ক্ষতি করছে। শিল্প ও ব্যবসায় ক্ষেত্রে শ্রমিকরা নানা শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা তাদের প্রকৃত দায়িত্ব ভুলে অনৈতিকভাবে হাসপাতালের বাইরে তাদের নিজস্ব চেম্বারে চিকিৎসা কাজে ব্যস্ত থাকছেন।

যোগাযোগ ক্ষেত্রে দুর্নীতির চিত্র সবার চোখের সামনেই হচ্ছে। এ সবই নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে হচ্ছে। তাই নৈতিক অবক্ষয় উন্নয়নের পথে প্রবল বাধা সৃষ্টি করছে। নৈতিক অবক্ষয় থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। একই সাথে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষকে নৈতিকতা তথা নীতি-আদর্শের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে প্রত্যেকটি কথায় ও কাজে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে নৈতিকতার চর্চা করে চরিত্রে সংশোধন আনতে হবে। তাহলেই নৈতিক অবক্ষয় কমে আসবে এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। আসুন আমরা সবাই নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করি।

আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post