মার্চের দিনগুলি

খুদে গল্প : বৃষ্টিভেজা বিকেল

‘বৃষ্টিভেজা বিকেল’ বিষয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো :

বৃষ্টিভেজা বিকেল

মার্জিয়া আজ সারাদিন ঘরে, সকাল থেকে ভারি বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আজ আর বের হতে পারেনি সে। মার্জিয়া ২৭ বছরের একজন সাধারণ মেয়ে, টিউশনি আর গানের স্কুলে গান শেখায়। বাবা-মা থাকে গ্রামে। ঢাকা শহরে সে একটি কর্মজীবী মেয়েদের হোস্টেলে থাকে।

ছাত্রছাত্রী আর কাজের জায়গাতে পরিচিত কয়েকজন ছাড়া মার্জিয়ার বেশি ভালো করে কথা বলার মতো তেমন কেউ নেই। আজ সকাল থেকে মার্জিয়ার মন ভালো নেই। ঘুম থেকে খুব সকালে উঠে অন্যদিনের মতো সে বের হতে পারেনি। মার্জিয়া তার ঘরের ছোট্ট জানালার সামনে বসে বৃষ্টির ফোঁটা দেখছে। জানালার পাশের রাস্তাটি একদম ফাঁকা। অন্যদিনের মতো ছোটো বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে না। পাশের বাসার কাজের মেয়েগুলো কাঁচা বাজার নিয়ে বাসায় ফিরছে না। ভ্যানের ওপর আজ কোনো দোকানি পসরা সাজিয়ে বসেনি৷

মার্জিয়া বৃষ্টির ফোঁটাগুলো দেখতে দেখতে তার ছোটবেলার কথা ভাবছিল। সে যখন কিশোরী ছিল এমন বৃষ্টির দিনে সে ঘরে বসে থাকত না। তার মায়ের শত বারণ সত্ত্বেও বৃষ্টির সময় উঠানে নেমে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজত অথবা কোনো কোনো সময় তার খেলার সাথিদের সঙ্গে নিয়ে পুকুরে ঝাপিয়ে সবাই মিলে স্নান করত।

মার্জিয়া আবার কী একটা গুণগুণ করতে থাকে। এর মধ্যে মার্জিয়া দরজায় শব্দ শুনতে পায়। মার্জিয়ার সামনের রুমে থাকা মেয়েটি এসে বলে মার্জিয়া আমার খুব জ্বর, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তুমি কি একটু কষ্ট করে আমার জন্য ওষুধ এনে দেবে। মার্জিয়া মেয়েটিকে বলে তুমি ঘরে যাও আমি তোমার জন্য ওষুধ এনে দিচ্ছি। মার্জিয়া একটা ছাতা আর কিছু টাকা নিয়ে নিচে নামল। এত বৃষ্টি যে, ছাতাতে বৃষ্টি ঠেকাতে পারছে না। মার্জিয়া একদম ভিজে গেল। কিছু করার নেই মার্জিয়ার, কোনো রিক্শা না পেয়ে হেঁটে এগিয়ে গেল ওষুধ কেনার জন্য। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর মার্জিয়া একটা ওষুধের দোকান খোলা পেল, সেখান থেকে ওষুধ কিনে ফেরার পথে হঠাৎ করে একটা সাইকেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে মার্জিয়া পড়ে গেল। ছেলেটা তার সাইকেল উঠিয়ে মার্জিয়ার কাছে এসে ক্ষমা চায় এবং বলে আপু আপনার লেগেছে? মার্জিয়া কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে ‘না’। ছেলেটা চলে যায়। মার্জিয়া আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়, হাঁটতে শুরু করে এবং অবাক হয়। একটু আগে যে ছেলেটার সাথে অ্যাক্সিডেন্ট করে তার একটি আইডি কার্ড পড়ে গেছে। ছেলেটা স্কুল ড্রেস পরে ছিল, মার্জিয়া বুঝতে পারে আইডি কার্ড ১৪-১৫ বছর বয়সি ছেলেটির। কিছু না বুঝে মার্জিয়া ফিরে আসে এবং তার পাশের রুমের মেয়েটিকে ওষুধ দেয়। মার্জিয়া তার ঘরে ফিরে দেখে যে ঘড়িতে তখন ৫টা বেজে ২৭ মিনিট। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, তবু বৃষ্টি এখনো কমেনি।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post