ভাবসম্প্রসারণ : অভাবে স্বভাব নষ্ট

অভাবে স্বভাব নষ্ট

মূলভাব : ধর্মোপদেশ, নীতিবাক্য অথবা কোনো যুক্তি ক্ষুধার্ত মানুষকে শান্ত করতে পারে না। অভাব থাকলে সে প্রয়োজন মেটানোর জন্য যেকোনো কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। 

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের অনেক চাহিদা আছে। তাই তার প্রত্যাশাও ব্যাপক। যখন সে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন সে সমস্যা অতিক্রম করতে চেষ্টা করে। সমস্যা অতিক্রম করতে সে নিজেই সমাধান আবিষ্কার করে। এভাবে প্রয়োজনে মানুষ অনেক কিছু আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। কেউ দুমুঠো ভাত আর একটু মাথা গোজার ঠাই পেলেই খুশি। আবার কেউ বিশাল প্রাসাদে বাস করেও শান্তি পায় না, তার আরও সম্পদের দরকার। কেউ বাঁচার তাগিদে সংগ্রাম করে আবার কেউ বিলাস ব্যসনের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় মগ্ন। এটাই আজকের সমাজের চিত্র। কিন্তু যে প্রয়োজনটুকু না মিটলেই নয়, যা দৈনন্দিন প্রয়োজন, বেঁচে থাকার জন্য যা না হলেই নয় তা যদি না পাওয়া যায়, তাহলেই জীবনে নেমে আসে অভিশাপ। কোনো নীতিকথায় মানুষের অভাব মেটে না। অভাব দূর করার জন্য সমস্ত ন্যায়নীতি বিসর্জন দিয়ে বেছে নেয় অবৈধ পথ। অভাব মেটানোর জন্য সে যেকোনো ধরনের হীনপন্থাও অবলম্বন করতে পারে। যার অভাব আছে তার কাছে পৃথিবীর সকল দর্শন, ন্যায়নীতি ও মূল্যবোধ মূল্যহীন। তাই বলা যায়, অভাব একটি বড় অভিশাপ। অভাবের তাড়নায় মানুষ ঘৃণিত পথে পা বাড়ায়। অভাবে পড়লে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। অভাব কোনো ন্যায়-অন্যায় দেখে না। ফলে মানুষের জীবন হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ ও জ্বালাময়। তখন মানুষ চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি করতে দ্বিধাবোধ করে না। অভাব অল্প হলে দুঃখও অল্প হয়। "A hunger man is an angry man."- এ কথাটির মাঝেই বোঝা যায় অভাবের দৃষ্টান্ত। অভাবী মানুষ তার অভাব দূর করার জন্য নীতি বিসর্জন দিয়ে অর্থ উপার্জন করে। অভাব বেশি হলে জীবনে এক মুহূর্তেও স্থিরতা আসে না। জীবনকে দুর্বিষহ বলে মনে হয়। তখন সে যেকোনো রকম পাপ করে। তাই বলা হয়ে থাকে, 'অভাবে স্বভাব নষ্ট'। 

সিদ্ধান্ত : আমাদের জীবনকে সুন্দর করতে হলে অভাবের সময় ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ধৈর্যের সুফল অনিবার্য এবং তা মধুর।

মোছা : সুমাইয়া আক্তার 
করতোয়া মাল্টিমিডিয়া কলেজ, বগুড়া।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post