ভাবসম্প্রসারণ : জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস

জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস

মূলভাব : আধুনিক বিশ্বে সরকার বা শাসকগোষ্টী সর্বময় ক্ষমতার অধিকার বটে; কিন্তু সে ক্ষমতার নেপথ্যে ক্রিয়াশীল থাকে দেশের জনগণের সমর্থন।

সম্প্রসারিত ভাব : 'জোর যায় মুল্লুক তার' - একসময় এটাই ছিল পৃথিবীর মানুষের রাজনৈতিক দর্শন। তখন পেশিশক্তিতে বলীয়ান কিছু মানুষের হাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল। সেক্ষেত্রে অনেক রাষ্ট্রের শাসকগোষ্টী রাষ্ট্রের স্থায়ী নাগরিক বা অধিবাসী নন; তারা বিদেশি কিংবা কোনো তথাকথিত উন্নত সভ্যতার ধারক-বাহক। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, বিবেক-বুদ্ধি, সচেতনতাবোধ ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই অধুনা বিশ্বে রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে গণতন্ত্র। আর গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হলো - 'জনগণই ক্ষমতার উৎস'। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে হয়। আর যেখানে পরোক্ষ ভোটে শাসকগোষ্ঠী নির্বাচিত হয় সেখানেও জনগণের মতামতের একটি প্রতিফলন ঘটে। কারণ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারাই এক্ষেত্রে প্রকৃত শাসকরা নির্বাচিত হন। আবার ক্ষমতাসীন হবার পর সরকারকে জনমতের ভিত্তিতেই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয়। সে সরকার জনমতকে অগ্রাহ্য করে কিংবা কঠিন হস্তে দমন করতে চায় সেই সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। স্বৈরাচারী আয়ুব খান ১৯৬৯-এর গণ আন্দোলনের চাপে টিকতে পারে নি। স্বৈরাচারী ইয়াহিয়ার সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েই জনগণ ছিনিয়ে নিয়েছে তার ক্ষমতা। স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। সুতারাং জাতীয় স্বার্থ ও কল্যাণের জন্যে জনমতকে গুরুত্ব দেয়া শাসকগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত।

মন্তব্য : যেহেতু গণতান্ত্রিক শাসন-ব্যবস্থায় জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস, সেহেতু শাসকগোষ্ঠীকে নিজেদের স্বার্থেই জনমতের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল হতে হয়। নতুবা জন-রায়ে তাদের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post