ব্যাকরণ : গঠন অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ (সরল, জটিল ও যৌগিক বাক্য রূপান্তর)

গঠন অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ

গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কি কি?

গঠন অনুযায়ী বাক্যে তিন প্রকার। যথা:—
  • (১) সরল বাক্য
  • (২) মিশ্র বা জটিল বাক্য
  • (৩) যৌগিক বাক্য

সরল বাক্য কাকে বলে?

সরল বাক্য — যে বাক্যে একটিমাত্র কর্তা (উদ্দেশ্য) এবং একটিমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া (বিধেয়) থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন— পুকুরে পদ্মফুল জন্ম। এখানে পদ্মফুল উদ্দেশ্য এবং জন্মে হলো বিধেয়। আরো কিছু সরল বাক্য:

বৃষ্টি হচ্ছে।

তোমরা বাড়ি যাও।

খোকা আজ সকালে স্কুলে গিয়েছে।

স্নেহময়ী জননী স্বীয় সন্তানকে প্রাণাপেক্ষা ভালোবাসেন।

বিশ্ববিখ্যাত মহাকবিরা ঐন্দ্রজালিক শক্তিসম্পন্ন লেখনী দ্বারা অমরতার সঙ্গীত রচনা করেন।

তাহার মাটির প্রাচীর পড়িয়া গিয়া পাষাণ আসিয়া পথে মিশিয়াছে।

পয়লা পয়লা কাজে নেমে সবাই ভিরমি খায়।

ইহারই সীমানার পথের ধারে গফুরের বাড়ি।

মিশ্র বা জটিল বাক্য কাকে বলে?

মিশ্র বা জটিল বাক্য — যে বাক্যে একটি প্রধান খন্ডবাক্যের এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর সাপেক্ষ ভাবে ব্যবহৃত হয়, তাকে মিশ্র বা জটিল বাক্য বলে। যথা:

আশ্রিত বাক্য —— প্রধান খন্ডবাক্য

যে পরিশ্রম করে — সেই সুখ লাভ করে।

সে যে অপরাধ করেছে — তা মুখ দেখেই বুঝেছি।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিশ্র বা জটিল বাক্যের উদাহরণ:
যে পরিশ্রম করে, সেই সুখলাভ করে।

যে ব্যক্তির মাথায় বুদ্ধি নেই, সে পরের সমালোচনায় উদ্বিগ্ন হয়।

সবাই জানেন যে, কালো টাকার মালিকগণ সুখী হন না।

লেখাপড়া বিষয়ে তার যে গভীর অনুরাগ ছিল, একথা বলা যায় না।

যদি তারে নাই চিনি গো, সে কি আমায় নেবে চিনে।

আমি মাঠে গিয়ে দেখলাম, খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে।

তিনি বাড়ি আছেন কিনা আমি জানি না।

লেখাপড়া করে যেই, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই।

খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি, আমার দেশের মাটি।

ধনধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা।

যেহেতু নির্বাচন হয়েছে, সেহেতু দেশে গনতন্ত্র ফিরে আসবেই।

যেহেতু বৃষ্টিতে ভিজেছ, সেহেতু সর্দি তোমার হবেই।

যেহেতু পড়াশোনা করেছ, সেহেতু কৃতকার্য হবেই।

যখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে।

যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাবো।

যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন এ ঋণ স্বীকার করব।

যে ভিক্ষা চায়, তাকেই দান কর।

যাদের বুদ্ধি নেই, তারাই একথা বিশ্বাস করবে।

যারা ভালো ছাত্র, তারা শিক্ষককে শ্রদ্ধা করবে।

তুমি ঢাকায় যাবে বলে, আমি উদ্বিগ্ন হয়ে আছি।

তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা, সখীনা বিবির কপাল ভাঙল।

যতই করিবে দান, ততই যাবে বেড়ে।

যেহেতু তুমি প্রথম হয়েছ, সেহেতু পুরষ্কার তুমিই পাবে।

যৌগিক বাক্য কাকে বলে?

যৌগিক বাক্য — পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা ততোধিক সরল বা মিশ্র বাক্য মিলিত হয়ে সম্পূর্ন একটি বাক্য গঠন করলে তাকে যৌগিক বাক্য বলে।

জ্ঞাতব্য: যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত নিরপেক্ষ বাক্যগুলো এবং, ও, কিন্তু, অথবা, অথচ, কিংবা, বরং, তথাপি — ইত্যাদি অব্যয় যোগে সংযুক্ত বা সমন্বিত থাকে। যেমন:

নেতা জনগণকে উৎসাহিত করলেন বটে, কিন্তু, কোনো পথ দেখাতে পারলেন না।

উদয়াস্ত পরিশ্রম করব, তথাপি অন্যের দ্বারস্থ হব না।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ জটিল বাক্যের উদাহরণ:–

মানুষ সূর্যাদয়ে আনন্দিত হয় এবং রাত্রির আগমনে পুলকিত হয়ে থাকে।

সমরেশ মজুমদার ভালো লেখক ছিলেন এবং তিনি বেশকিছু মূল্যবান উপন্যাস লিখেছেন।

সে প্রচুর পড়াশোনা করেছিল কিন্তু পরীক্ষায় পাস করতে পারে নি।

তার অনেক বয়স হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয় নি।

তিনি অত্যন্ত দরিদ্র কিন্তু তার মূল্যবোধ অনেক উচ্চ।

তার অনেক টাকা আছে তথাপি তিনি দান করেন না।

তিনি আমাকে দশটি টাকা দিলেন এবং স্কুলে যেতে বললেন।

মিথ্যা কথা বলিনি, তাই বিপদে পড়েছি।

বিপদ এবং দুঃখ একসাথে আসে।

মেঘ গর্জন করে, তবেই ময়ূর নৃত্য করে।

তিনি আমাদের এলাকা পরিদর্শন করলেন এবং গরীবদের সাহায্য করলেন।

সে কারো বশ্যতা স্বীকার করতে চায় না, এদিকে টাকার অভাব হলেই যার তার কাছে আত্মসম্মান বলি দিয়ে হাত পাতে।

বাক্য রূপান্তর কাকে বলে?

অর্থের কোনোরূপ রূপান্তর না করে এক প্রকারের বাক্যকে অন্য প্রকার বাক্যে রূপান্তর করার নামই বাক্য রূপান্তর।

সরল বাক্যকে থেকে মিশ্র বাক্যে রূপান্তর


সরল বাক্যকে মিশ্র বাক্যে পরিণত করতে হলে সরল বাক্যের কোনো অংশকে খন্ডবাক্যে পরিণত করতে হয় এবং উভয়ের সংযোগ বিধানে সম্বন্ধসূচক (যদি, তবে, সে, যে ইত্যাদি) পদের সাহায্যে উক্ত খন্ডবাক্য ও প্রধান বাক্যটিকে পরস্পর সাপেক্ষ করতে হয়। যেমন:

সরল বাক্য : ভালো ছেলেরা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।
মিশ্র বাক্য : যারা ভালো ছেলে, তারা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।

সরল বাক্য : তার দর্শনমাত্রই আমরা প্রস্থান করলাম।
মিশ্র বাক্য : যে—ই তার দর্শন পেলাম, সে—ই আমরা প্রস্থান করলাম।

সরল বাক্য : ভিক্ষুককে দান কর।
মিশ্র বাক্য : যে ভিক্ষা চায়, তাকে দান কর।

সরল বাক্য : রৌদ্রতাপ কমে এলে পরামর্শ করা যাবে।
মিশ্র বাক্য : যখন রৌদ্রতাপ কমবে তখন পরামর্শ করা যাবে।

সরল বাক্য : শোনামাত্র তারা আনন্দে চিৎকার করে উঠলো।
মিশ্র বাক্য : যখনই তারা শুনল তখনই তারা আনন্দে চিৎকার করে উঠলো।

সরল বাক্য : গণ্ডির বাহিরে গেলেই বিষম বিপদ।
মিশ্র বাক্য : যখনই গণ্ডির বাহিরে যাবে তখনই বিষম বিপদে পড়বে।

সরল বাক্য : পয়লা পয়লা কাজে নেমে সবাই ভিরমি খায়।
মিশ্র বাক্য : পয়লা পয়লা যারা কাজে নামে তারা সবাই ভিরমি খায়।

সরল বাক্য : চোখ বেঁধে দিলেও ঠিক বের করতে পারব কোথায় জলের কল, কোথায় চা–খিলির দোকান।
মিশ্র বাক্য : যদি চোখ বেঁধে দাও তবু বের করতে পারব কোথায় জলের কল, কোথায় চা–খিলির দোকান।

সরল বাক্য : ইহারই সীমানার পথের ধারে গফুরের বাড়ি।
মিশ্র বাক্য : ইহার সীমানার পথের ধারে গফুরের বাড়ি।

সরল বাক্য : গোড়ায় বলাই শিমুল গাছটা না দেখালে ওটা আমার হয়তো লক্ষ্যই হতো না।
মিশ্র বাক্য : গোড়ায় বলাই শিমুল গাছটা না যদি দেখাত তবে হয়তো ওটা আমার লক্ষ্যই হতো না।

সরল বাক্য : এই–সব প্রকাণ্ড গাছের ভিতরকার মানুষকেও যেন বলাই দেখতে পায়।
মিশ্র বাক্য : এই–সব প্রকাণ্ড গাছের ভেতর যে মানুষ আছে, তাকে বলাই যেন দেখতে পায়।

মিশ্র বাক্যকে থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর


মিশ্র বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হলে মিশ্র বাক্যের অপ্রধান খন্ডবাক্যটিকে সংকুচিত করে একটি পদ বা একটি বাক্যাংশে পরিণত করতে হয়।যথা:

মিশ্র বাক্য : যাদের বুদ্ধি নেই, তারাই একথা বিশ্বাস করবে।
সরল বাক্য : নির্বোধরা / বুদ্ধিহীনরা এ কথা বিশ্বাস করবে।

মিশ্র বাক্য : যতদিন জীবিত থাকব, ততদিন এ ঋণ স্বীকার করব।
সরল বাক্য : আজীবন এ ঋণ স্বীকার করব।

মিশ্র বাক্য : যে সকল পশু মাংস ভোজন করে, তারা অত্যন্ত বলবান।
সরল বাক্য : মাংসভোজী পশু অত্যন্ত বলবান।

মিশ্র বাক্য : হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন একজন মানব যিনি ছিলেন আদর্শবান।
সরল বাক্য : হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) একজন আদর্শ মানব ছিলেন।

মিশ্র বাক্য : যেমন কাজ করবে, তেমন ফল পাবে।
সরল বাক্য : কাজ অনুযায়ী ফল পাবে।

মিশ্র বাক্য : যদিও ছোট, তবু রসে ভরা।
সরল বাক্য : ছোট হলেও রসে ভরা।

মিশ্র বাক্য : লেখাপড়া করে যেই, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই।
সরল বাক্য : লেখাপড়া করলে গাড়ি ঘোড়ায় চড়তে পারবে।

মিশ্র বাক্য : যেহেতু হাসান নিয়মিত পড়াশোনা করে সেজন্য সে পুরষ্কার পায়।
সরল বাক্য : হাসান নিয়মিত পড়াশোনা করার কারণেই পুরষ্কার পায়।

লক্ষণীয় — সরল বাক্যকে মিশ্র বাক্যে রূপান্তর করা শিখলে আপনি মিশ্র বাক্যকে এমনিই সরল বাক্যে খুব সহজে পরিণত করতে পারবেন।

বিঃদ্রঃ মিশ্র বাক্যের অপরনাম জটিল বাক্য।

সরল বাক্য থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর


সরল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে পরিণত করতে হলে সরল বাক্যের কোনো অংশকে নিরপেক্ষ বাক্যে রূপান্তর করতে হয় এবং যথাসম্ভব সংযোজক বা বিয়োজক অব্যয়ের প্রয়োগ করতে হয়। যেমন —


সরল বাক্য : তিনি আমাকে পাঁচ টাকা দিয়ে বাড়ি যেতে বললেন।
যৌগিক বাক্য : তিনি আমাকে পাঁচটি টাকা দিলেন এবং বাড়ি যেতে বললেন।

সরল বাক্য : পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এখন থেকেই তোমার পড়া উচিত।
যৌগিক বাক্য : এখন থেকেই তোমার পড়া উচিত, তবেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে।

সরল বাক্য : আমি বহু কষ্টে শিক্ষা লাভ করেছি।
যৌগিক বাক্য : আমি বহু কষ্ট করেছি, ফলে শিক্ষা লাভ করেছি।

সরল বাক্য : ভোর হলে, সে ব্যক্তি, ঐ ইউরোপীয়ের সঙ্গে কিছুটা দূরে গেল।
যৌগিক বাক্য : যখন ভোর হলো তখন সে ব্যক্তি ঐ ইউরোপীয়ের সঙ্গে কিছুটা দূরে গেল।

সরল বাক্য : গৃহস্বামী তার কাছে গিয়ে নিজের দুরবস্থা জানাল।
যৌগিক বাক্য : সে গৃহস্বামীর কাছে গেল এবং নিজের দুরবস্থা জানাল।

সরল বাক্য : তুমি আমাকে আমার বাড়িতে পৌঁছে দাও।
যৌগিক বাক্য : যে স্থানে আমার বাড়ী তুমি আমায় সেখানে পৌঁছে দাও।

সরল বাক্য : তাহার মাটির প্রাচীর পড়িয়া গিয়া পাষাণ আসিয়া পথে মিশিয়াছে।
যৌগিক বাক্য : তাহার মাটির প্রাচীর পড়িয়া গিয়াছে এবং পাষাণ আসিয়া পথে মিশিয়াছে।

সরল বাক্য : গফুর কত কি চিন্তা করিয়া হঠাৎ সেই সমস্যার সমাধান করিয়া ফেলিল।
যৌগিক বাক্য : গফুর কত কি চিন্তা করিল এবং হঠাৎ সেই সমস্যার সমাধান করিয়া ফেলিল।

সরল বাক্য : ওর সমস্ত মনটাতে ভিজে হাওয়া যেন শ্রাবণ–অরণ্যের গন্ধ নিয়ে ঘনিয়ে ওঠে।
যৌগিক বাক্য : ওর সমস্ত মনটাতে ভিজে হাওয়া লাগে এবং শ্রাবণ–অরণ্যের গন্ধ যেন ঘনিয়ে তোলে।

সরল বাক্য : শিমুল গাছটা বড় হলে চারদিকে তুলো ছড়িয়ে অস্থির করে দেবে।
যৌগিক বাক্য : শিমুল গাছটা একদিন বড় হবে এবং চারিদিকে তুলো ছড়িয়ে অস্থির করে দেবে।

যৌগিক বাক্য থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর


যৌগিক বাক্যকে সরল বাক্যে পরিণত করতে হলে:
  • (১) বাক্যসমূহের একটি সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রাখতে হবে।
  • (২) অন্যান্য সমাপিকা ক্রিয়াকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হবে।
  • (৩) অব্যয় পদ থাকলে তা বর্জন করতে হবে।
  • (৪) কোনো কোনো স্থলে একটি বাক্যকে হেতুবোধক বাক্যাংশে পরিণত করতে হয়। যথাঃ—

যৌগিক বাক্য : সত্য কথা বলিনি, তাই বিপদে পড়েছি।
সরল বাক্য : সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি।

যৌগিক বাক্য : তার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয়নি।
সরল বাক্য : তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি।

যৌগিক বাক্য : মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে।
সরল বাক্য : মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে।

যৌগিক বাক্য : এখন পরকালের কর্ম করিব নাতো কবে করিব?
সরল বাক্য : এখন পরকালের কর্ম না করিলে কবে করিব?

যৌগিক বাক্য : সেইটে দেখে, আর বলাইয়ের মন ভারি খুশী হয়ে ওঠে।
সরল বাক্য : সেইটে দেখে বলাইয়ের মন ভারী খুশী হয়ে ওঠে।

যৌগিক বাক্য : আমার এক চাকর ছিল, তার নাম আব্দুর রহিম।
সরল বাক্য : আব্দুর রহিম নামে আমার এক চাকর ছিল।

যৌগিক বাক্য : কবিত্ব আমার আসে না, তাই প্রকৃতির সৌন্দর্য্য আমার চোখে ধরা পড়ে না।
সরল বাক্য : কবিত্ব আমার চোখে আসে না বলে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য আমার চোখে ধরা পড়ে না।

যৌগিক বাক্য : বৈশাখ শেষ হইয়া আসে কিন্তু মেঘের ছায়াটুকু কোথাও নাই।
সরল বাক্য : বৈশাখ শেষ হয়ে আসিলেও মেঘের ছায়াটুকু কোথাও নেই।

লক্ষণীয় : যে কোনো একটা বাক্য রূপান্তর ভালোভাবে আয়ত্ত করলে অপরটি সহজেই পারা যাবে।

মিশ্র বাক্য থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর


মিশ্র বাক্যকে যৌগিক বাক্যে পরিবর্তন করতে হলে খন্ড বাক্যগুলোকে এক একটি স্বাধীন বাক্যে পরিবর্তন করে তাদের মধ্যে সংযোজক অব্যয়ের ব্যবহার করতে হয়। যেমন—

মিশ্র বাক্য : যদি সে কাল আসে, তাহলো আমি যাব।
যৌগিক বাক্য : সে কাল আসবে এবং আমি যাব।

মিশ্র বাক্য : যখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে।
যৌগিক বাক্য : বিপদ এবং দুঃখ এক সময়ে আসে।

মিশ্র বাক্য : যদিও তাঁর টাকা আছে, তথাপি তিনি দান করেন না।
যৌগিক বাক্য : তাঁর টাকা আছে কিন্তু তিনি দান করেন না।

মিশ্র বাক্য : বাইরে এসে দেখলাম যে প্রায় প্রভাত হয়েছে।
যৌগিক বাক্য : বাইরে এলাম এবং প্রায় প্রভাত হয়েছে দেখলাম।

মিশ্র বাক্য : তারা যদিও কথা কয় না, কিন্তু বলাই সমস্ত কথাই যেন জানে।
যৌগিক বাক্য : তারা কথা কয় না, কিন্তু বলাই সমস্তই যেন জানে।

মিশ্র বাক্য : যদি আমার কথা না শুন, ভবিষ্যতে অনুতাপ করবে।
যৌগিক বাক্য : আমার কথা না শুনলে ভবিষ্যতে অনুতাপ করবে।

মিশ্র বাক্য : যেহেতু সে নিয়মিত পড়াশোনা করে সেজন্য সে পুরষ্কার পায়।
যৌগিক বাক্য : সে নিয়মিত পড়াশোনা করে বলে পুরষ্কার পায়।

মিশ্র বাক্য : যেহেতু কোথাও কোন পথ পাইনি তাই তোমার কাছে এসেছি।
যৌগিক বাক্য : কোথাও পথ পেলাম না বলে তোমার কাছে এসেছি।

যৌগিক বাক্য থেকে মিশ্র বাক্যে রূপান্তর


যৌগিক বাক্য কে মিশ্র বাক্যে রূপান্তর করতে হলে যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত পরস্পর নিরপেক্ষ বাক্য দুটির প্রথমটির পূর্বে 'যদি' কিংবা 'যদিও' এবং দ্বিতীয়টির পূর্বে 'তাহলে' (তাহা হলে) কিংবা 'তথাপি' অব্যয়গুলো ব্যবহার করতে হয়। যেমন—

যৌগিক বাক্য : দোষ স্বীকার কর, তোমাকে কোনো শাস্তি দিব না।
মিশ্র বাক্য : যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোনো শাস্তি দিব না।

যৌগিক বাক্য : তিনি অত্যন্ত দরিদ্র কিন্তু তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।
মিশ্র বাক্য : যদিও তিনি দরিদ্র, তথাপি তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।

যৌগিক বাক্য : ছোট কিন্তু রসে ভরা।
মিশ্র বাক্য : যদিও ছোট, তবু রসে ভরা।

যৌগিক বাক্য : কাজ কর, অনুরূপ ফল পাবে।
মিশ্র বাক্য : যেমন কাজ করবে তেমন ফল পাবে।

যৌগিক বাক্য : সত্যবাদী বলে তাকে সকলে বিশ্বাস করে।
মিশ্র বাক্য : যে সত্য কথা বলে, তাকে সকলে বিশ্বাস করে।

যৌগিক বাক্য : সত্য বল তাহলে মুক্তি পাবে।
মিশ্র বাক্য : যদি সত্য বল, তাহলে মুক্তি পাবে।

যৌগিক বাক্য : তুমি বেশি নম্বর পেয়েছ বলে প্রথম হবে।
মিশ্র বাক্য : যেহেতু তুমি বেশি নম্বর পেয়েছ, সুতরাং তুমি প্রথম হবে।

যৌগিক বাক্য : হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন একজন মানব এবং তিনি ছিলেন আদর্শবান।
মিশ্র বাক্য : হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন একজন মানব যিনি ছিলেন আদর্শবান।

যৌগিক বাক্য : তুমি অধম, তাই বলে আমি উত্তম হবো না কেন?
মিশ্র বাক্য : যদি তুমি অধম হও, তবুও আমি উত্তম হবো না কেন?

যৌগিক বাক্য : লেখাপড়া কর তাহলে গাড়ি ঘোড়ায় চড়তে পারবে।
মিশ্র বাক্য : লেখাপড়া করে যেই, গাড়ি ঘোড়া চড়ে ঘুরে সেই।

সাপেক্ষ অব্যয়ের সাহায্যেও যৌগিক বাক্যকে মিশ্র বাক্যে পরিবর্তন করা যায়। যেমন—

যৌগিক বাক্য : এ গ্রামে একটি দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত হয়েছে।
মিশ্র বাক্য : এ গ্রামে যে দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত হয়েছে।

লক্ষণীয় — যে কোনো এক ফরমেট ভালো করে শিখে ফেলুন তাহলে বাকিটা সহজে রূপান্তর করতে পারবেন।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post