অনুচ্ছেদ : পথ শিশু
পথ শিশু
পথশিশু বলতে পথে পথে ঘুরে বেড়ানো, জীবনযাপনকারী শিশুদের বোঝায়। শহরের ছোট-বড় পথে আমরা যাদেরকে খেলতে দেখি, ছোটাছুটি করতে দেখি, মারামারি করতে দেখি এরাই পথশিশু। এরা নানা রকম কাজ করে। কেউ জোগালির কাজ বা ফাই-ফরমাশ করে, মুটেগিরি করে, ইট ভাঙে, ফুল, চকলেট বা টুকটাক কিছু বিক্রি করে, কাগজ কুড়ায় বা ভিক্ষা করে। এদের পথই ঘর, পথই আশ্রয়। এদের কারও বাবা আছে তো মা নেই, কারও বাবা নেই, আবার কারও বাবা-মা কেউ নেই। মানুষের কিল, ঘুষি, লাথি খেয়ে, হোটেলের উচ্ছিষ্ট চেটে এরা বড় হয়। খুব কম বয়স থেকেই চোর, গুণ্ডা, বগমাশ, বাটপাড়, ছিনতাইকারী, বোমাবাজ, খুনিদের দেখে দেখেই এরা বেড়ে ওঠে। ভালো মানুষরূপী দানবদের ভয়ংকর চেহারার সাথেও এদের পরিচয় হয়। আবার সত্যিকারের ভালো চরিত্রের মানুষদেরও সাক্ষাৎ পায় তারা, যারা তাদের বিপদ-আপদে আপনজনের মতো, সাহায্য-সহযোগিতা করে। এরা ব্যবসায়ীদের অপকর্ম, রাজনীতিবিদদের ছলচাতুরী, পুলিশের দুমুখো রূপের খবরও রাখে। হাল আমলের নায়ক-নায়িকা, গানের শিল্পীদের এরা খুব পছন্দ করে। তাদের চলন-বলন নকল করে আনন্দ পায়। খারাপ মানুষেরা এদের খারাপ পথে নিয়ে যায়। অবৈধ ব্যবসায়ীরা মাদকদ্রব্য বহন ও বিক্রি করাতে এদেরকে ব্যবহার করে। ফলে এরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ভালো মানুষেরা এদেরকে ভালোবেসে ভালো কাজ করায়, ভালো পরামর্শ দেয়। আজকাল পথশিশুদের জন্য স্কুল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে, যাতে তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে।
একই অনুচ্ছেদ আরেকবার সংগ্রহ করে দেয়া হলো
পথশিশু বলতে পথে পথে কর্মহীন যে শিশু ঘুরে বেড়ায় তাকে বোঝায়। বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট রফিকুন্নবী, যিনি রনবী নামে পরিচিত, এসব শিশুদের নাম দিয়েছিলেন ‘টোকাই’। টোকাই নামের মধ্যেই রয়েছে এসব শিশুর বাস্তব পরিচয়। তারা স্কুলে যায় না এবং সমাজের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত। নোংরা-ময়লা পোশাক পরে পথে-প্রান্তরে এমন কি ডাস্টবিনে ময়লার মধ্যে পরিত্যক্ত জিনিসপত্র টোকায়। খেয়ে না খেয়ে এদের প্রতিটি দিন কাটে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পথশিশুদের জীবন চলতে থাকে। অথচ শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। উন্নত দেশে শিশুদের ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে তাদের পরিচর্যা মাতৃগর্ভ থেকেই শুরু হয়। সেখানে আমাদের দেশে জন্মের পর হাঁটাতে শিখলেই তারা ঘুরতে থাকে অনিশ্চয়তার পথে। অশিক্ষা, দরিদ্রতা আ জীবিকার দুর্ভাবনায় শিশুরা যোগ্য হয়ে বেড়ে উঠতে পারে না। এক্ষেত্রে শিশুদের অভিভাবকরা নানা সীমাবদ্ধতার কারণে উদাসীনতা পরিচয় দেয়। এসব শিশুরা একদিকে যেমন যোগ্য হয়ে ওঠে না অন্যদিকে অল্প বয়সেই তারা মারাত্মক রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এছাড়া এরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ে। ফলে সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়। এসব পথশিশুদের কল্যাণে বা সুযোগসুবিধা সৃষ্টি করতে সরকার বা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সমাজের ধানঢ্য শ্রেণির ব্যক্তিদের এগিয়ে না আসাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। পথশিশুদের দায়িত্ব নিলে এরা বেড়ে উঠত সত্যিকারের মানুষরূপে। এরা পথশিশু নয়; পথকলি। এদের বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। তাহলেই সমগ্র জাতি সুবাসিত হবে।
No comments