রচনা : ফেরিওয়ালা

ভূমিকা : যারা নানারূপ দ্রব্য নিয়ে হেঁটে হেঁটে বিক্রি করে, তাদের ফেরিওয়ালা বলে। বলতে গেলে একটি ক্ষুদ্র দোকান মাথায়, বগলে বা পৃষ্ঠে বহন করে বিভিন্ন দ্রব্যের নাম করতে করতে ফেরিওয়ালা রাস্তা দিয়ে অগ্রসর হয়। 

ফেরির ধরন : তার বিচিত্র স্বরে ক্রেতা আকৃষ্ট হয়ে দ্রব্য ক্রয় করে। পল্লী অঞ্চলে ফেরিওয়ালা আছে, তারা নির্দিষ্ট সময়ে পল্লীর পথ ধরে হাঁকতে হাঁকতে চলে যায়। শহরে এ ফেরিওয়ালার সংখ্যা অধিক। এক মনোহারী দ্রব্য নিয়ে অমন শত শত ফেরিওয়ালা শহরের অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়ায়। 

ফেরির সামগ্রী : সামান্য চুলের কাঁটা থেকে আরম্ভ করে পোশাক-পরিচ্ছদ সবই ফেরিওয়ালার নিকট পাওয়া যায়। যে সব দ্রব্য নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং বিশেষ করে যে সমস্ত জিনিস স্ত্রীলোকের প্রয়োজন, সে সব দ্রব্য নিয়ে কিছু ফেরিওয়ালা দিনের বেলায় ফেরি করে বেড়ায়। তাছাড়া অনেকে বড় বড় রাজপথে সংবাদপত্র, রুমাল, ফিতা, বোতাম প্রভৃতি নানারূপ দ্রব্য নিয়ে ফেরি করে থাকে। বাসে, রেলগাড়িতে সর্বত্রই ফেরিওয়ালা দেখা যায়। ফেরি করা বর্তমান যুগে একটি রীতিমত ব্যবসা। অনেক সময় বড় ব্যবসায়ের বিজ্ঞাপন হিসেবেও ফিরিওয়ালা করে থাকে। জনতাকে আকৃষ্ট করার জন্য নানাকৌশল অবলম্বন করে। কথায় লোককে যে যত অভিভূত করতে পারবে তার ততই বিক্রি। অতএব, এই প্রকার ব্যবসায়ে বিক্রেতার কৃতিত্বিই সমধিক, বিক্রীত দ্রব্যের গুণ নয়। অনেক সময় নানারূপ গীতবাক্য সহকারেও ফেরিওয়ালা ফেরি করে বেড়ায়। 

উপকারিতা : কখনও কখনও বহুরূপ সেজে তারা ক্রেতা সংগ্রহকরে। এসব উপায়ে অন্তরালে বিশেষ কোন মালের কাটতিই একমাত্র উদ্দেশ্য। ব্যবসাক্ষেত্রে ফেরিওয়ালা খুব উপকারী। ক্রেতাদের দিক থেকে ফেরিওয়ালার উপকারিতা এই যে, তারা অনেক সময় বাড়ি বসে কিংবা বাসে, স্টীমারে অথবা ট্রেনে বসে ইচ্ছামত দ্রব্যাদি ক্রয় করতে পারে। দোকানের দর থেকে ফেরিওয়ালার নিকট দর কখনও কম, কখনও বেশি হয়ে থাকে। 

অপকারিতা : ফেরিওয়ালা প্রায়ই ফাঁকির মতলবে থাকে। যেহেতু তাদের অবস্থিতির কোন স্থিরতা নেই, সেহেতু সুবিধা ফেলেই তারা নিরীহ খরিদ্দারদের ঠকিয়ে থাকে। অনেক সময় কম দামের জিনিস নানা কথায় ভুলিয়ে বেশি দামে বিক্রি করে। আর প্রায়ই তারা আসল জিনিস বলে নকল জিনিস বিক্রি করে থাকে। 

পথে পথে এ সমস্ত ফেরিওয়ালা এরূপ ভিড় করে যে, অনেক সময় চলাচল কষ্টকর হয়ে ওঠে। তারা রেলগাড়িতে এরূপ ভিড় জমিয়ে বক্ বক্ করতে আরম্ভ করে দেয় যে, অনেকে অসাবধান হয়ে নানারকম দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ফেরিওয়ালা অনেক সময় পথিককে বিরক্ত করে তোলে। ফলে অনেকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও জিনিস ক্রয় করতে বাধ্য হয়। 

কিছুদিন যাবত ঢাকা শহরে ফেরিওয়ালা অবাধে ফুটপাত বা রাস্তা দখল করে জনসাধারণের পথ চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এদের জন্য বিলাতের অনুকরণে কোন কোন জায়গায় হকার্স মার্কেটের ব্যবস্থা করা দরকার। 

উপসংহার : ফেরিওয়ালারা যে বর্তমান যুগে একটি শুভ প্রতিষ্ঠান, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ফেরিওয়ালাদের জীবনযাত্রার পদ্ধতি যাই হউক না কেন, তাদের ফেরির পদ্ধতি যে কত বিচিত্র, তা বর্ণনা করা কঠিন। ভাল দ্রব্য নিয়ে সৎপথে থেকে যদি ফেরিওয়ালারা কারবার করে, তবে তাদের উন্নতি অনিবার্য। বর্তমানে বেশিরভাগ খরিদ্দারই ফেরিওয়ালাদের প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন নয়। যদি ফেরিওয়ালারা নিজের ব্যবহারে ক্রেতাদের সহানুভূতি লাভ করতে পারে, তাহলে তারা যথেষ্ট রোজগার করতে পারবে এবং নিতান্ত অল্প মূলধনে ব্যবসা করে অন্নের সংস্থান করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post