আলো বলে, ‘অন্ধকার, তুই বড় কালো’
অন্ধকার বলে, ‘ভাই, তাই তুমি আলো!’
আলো ও অন্ধকার পরস্পরের পরিপূরক। এদের একটির অস্তিত্ব ও মূল্য নির্ভর করে অন্যটির ওপর। অন্ধকার আছে বলেই আলোর এত মুল্য, এত ঔজ্জ্বল্য। কালো আঁধারের পটভূমিতেই উদ্ভাসিত হয় আলোর মহিমা। আলো ও আঁধারের যুগল অস্তিত্ব প্রকৃতি ও জীবনের বৈশিষ্ট্যকেই তুলে ধরে।
বিশ্বজগতে সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা প্রভৃতি বিপরীতধর্মী ব্যাপারের মতোই আলো ও আঁধার পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত বিপরীতধর্মী ব্যাপার। এদের একটি ছাড়া অন্যটির অস্তিত্ব নিরর্থক ও তাৎপর্যহীন হয়ে পড়ে। দুঃখ সয়েই আমরা সুখের আনন্দ ও মহিমাকে উপলব্ধি করি। মন্দ আছে বলেই ভালোর এত সমাদর। নিন্দনীয় মিথ্যাকে ছাপিয়ে ওঠে বলেই সত্য পায় নন্দিত মহিমা। এভাবে যা-কিছু আমরা মন্দ, পরিত্যাজ্য, অপ্রাপ্যনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মনে করি, সেসব কোন না কোনভাবে বিশ্বজগতের অপরিহার্য সত্য হিসেবে বিরাজ করছে। আলো পৃথিবীকে কর্মচঞ্চল রাখে। আর অন্ধকার কর্মক্লান্ত মানুষের জীবনে নিয়ে আসে বিশ্রামের সুযোগ।
তাই অন্ধকারকে কালো বলে যে কেউ নিন্দা করুক তাকে নিন্দা করার কোন অধিকার আলোর নেই। কারণ, অন্ধকার না থাকলে আলো তার অস্তিত্ব ও মূল্য হারায়। অন্ধকারের পটভূমিতেই আলো হয়ে ওঠে সত্য, পায় উজ্জ্বল মহিমা। আলো ও অন্ধকার এই দুই বিপরীতের ঐক্য ও অস্তিত্ব মানব জীবনের অপরিহার্য বাস্তবতা।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
সৃষ্টিকর্তা আলো ও অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীতে অন্ধকারের অভাবে আলোর গৌরব ম্লান হয়ে যায়। আলো এবং অন্ধকার পরস্পর বিপরীতধর্মী হলেও একে অপরের পরিপূরক। মানবজীবনের সর্বত্র আলো-আঁধাররূপ সুখ-দুঃখের সমাবেশ দেখতে পাওয়া যায়। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির অস্তিত্ব কল্পনামাত্র। জীবনে আলো-আঁধার, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পাশাপাশি আছে বলেই জীবনের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য সহজে অনুধাবন করা যায়। আলো এবং অন্ধকার পরস্পরের পরিপূরক।
এ জগতে আলো ও অন্ধকার উভয়ের সমাবেশ দেখতে পাওয়া যায়। আঁধারের পটভূমিতেই উদ্ভাসিত হয় আলো মহিমা। যদি পৃথিবীতে কখনো সূর্য অস্ত না যেত, অহোরাত্র সূর্যালোক চারদিকে প্লাবিত হত, তাহলে তার কি কোনো মূল্য থাকত? অন্ধকার এসে দিবালোককে গ্রাস করে বলেই দিনের আলো বৈচিত্র্যহীন ও বৈশিষ্ট্যহীন হয়ে পড়ে না।। আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে পরস্পর বিপরীতধর্মী উপাদানসমূহের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া সচল অস্তিত্বমান। সৃষ্টি-ধ্বংস, জন্ম-মৃত্যু, আলো-আঁধার, সুখ-দুঃখ এ সবই পরস্পর বিপরীত ধর্মী হলেও একে অপরের পরিপূরক। নিরবচ্ছিন্ন সবকিছুর অস্তিত্বই মূল্যহীন। মৃত্যু অবধারিত বলেই জীবন এত মূল্যবান। পৃথিবীতে মৃত্যুর উপস্তিতি না থাকলে জীবন হত মূল্যহীন। ধ্বংসের ভয় আছে বলেই মানুষ সৃষ্টিকে সংরক্ষিত করে, ভালোবাসে। পৃথিবীতে সুখের অস্তিত্ব আছে বলেই মানুষ দুঃখকে হাসিমুখে বরণ করে সুখের আশায়। আর দুঃখের অস্তিত্ব আছে বলেই সুখের বৃন্তে বসবাস করার জন্য মানুষের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা।
আলোর রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্যে যেমন অন্ধকার একান্ত প্রয়োজন, তেমনি দুঃখবেদনা ও অভাবের তীব্র জ্বালা আছে বলেই আমাদের জীবনে সুখ, আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য এত কাম্য। তাই বলা হয়, ’দুঃখের মত এত বড় পরশপাথর আর নেই’। দুঃখ সয়েই আমরা সুখের আনন্দ ও মহিমাকে উপলব্ধি করি। বস্তুত আলো ও আঁধারের যুগল অস্তিত্ব প্রকৃতি ও জীবনের বৈশিষ্ট্যকেই তুলে ধরে।
Thanks
ReplyDeleteThx
ReplyDeleteThank's For this post
ReplyDeleteThanks
ReplyDelete