মার্চের দিনগুলি

খুদে গল্প : শীতে গ্রামের স্মৃতি

"শীতে গ্রামের স্মৃতি" শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।

শীতে গ্রামের স্মৃতি

ঋতু পরিক্রমায় প্রকৃতির বুকে হেমন্তের আগমন ঘটেছে। বাতাসে শীতের আমেজ সুস্পষ্ট। ঘরে ঘরে সোনালি ফসলের আনন্দ। চতুর্দিকে নবান্ন উৎসবের আয়োজন। ঋতু পরিক্রমায় প্রকৃতির বুকে হেমন্তের আগমন ঘটেছে। বাতাসে শীতের আমেজ সুস্পষ্ট। ঘরে ঘরে সোনালি ফসলের আনন্দ। চতুর্দিকে নবান্ন উৎসবের আয়োজন চলছে পূর্ণোদ্যমে। রাহেলা বেগমের পরিবারের তাই আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। প্রতিবছর এ সময়ে তার শহুরে ছেলে-মেয়েরা বাড়ি ফিরে আসে। তাদের পেয়ে সারা বছরের শূন্যতাকে তিনি যেন ভুলে যান। তার বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে পড়ে। ছোট মেয়েটি পড়ে ইডেন মহিলা কলেজে। ইতিমধ্যে তারা ফোন করে মাকে জানিয়েছে আগামীকালই তারা আসছে। তাই রাহেলা বেগমের চোখে ঘুম নেই। বর্গা দেয়া ধান ক্ষেত থেকে এবার প্রচুর ধান এসেছে। বাড়ির উঠানে নারী-পুরুষের একসাথে ধান মাড়াই আর খোশগল্প বাড়িটিকে যেন বিয়ের আয়োজনের মতো জমিয়ে রেখেছে। টিনের ঘরের দরজায় পিড়ি নিয়ে সব তদারকি করছেন রাহেলা বেগম। তার চোখে যেন সুখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ভাবতে ভাবতে সে মুহূর্তে হারিয়ে যায় সেই দিনগুলোতে। যখন তার স্বামী জীবিত ছিল তখন এ বাড়িতে কত বড় বড় অনুষ্ঠান হতো! গায়ের সম্ভ্রান্ত লোকেরা এ বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া ছাড়া যেন শীতের শুরুই হতো না! কল্পনার রাজ্যে রাহেলার চোখে ভেসে ওঠে ছেলে সুহাশ ও মেয়ে রিক্তার শৈশবের দূরন্তপনার কথা। পাকা ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়ে তাদের ভোঁ দৌড়, দুই-ভাইবোনের লুকোচুরি খেলা, একে অপরের সাথে ঠুনকো বিষয় নিয়ে খুনসুটি এসব নিয়ে মায়ের কাছে দুজনের অনুযোগ সবই এখন হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি এইতো সেদিন নুহাশ ও রিক্তা ধানক্ষেত পাহাড়ার জন্য তৈরি খড়ের টঙে বসে জিলেপি খেয়েছে। শীত আসলেই জিলেপি বিক্রেতারা টসটসে রসালো জিলেপি নিয়ে শীতের শিশির ভেজা সকালে ধানক্ষেত্রের কাছে দিয়ে যেত আর হাঁক ডাক ছাড়ত। নুহাশ ক্ষেতের ধান দিয়ে জিলেপি কিনত আর রিক্তাকে নিয়ে খেত। তারা দু ভাইবোন শীতের জিলেপি আর কুড়কুড়ে চাপা মোয়া খেতে খুব পছন্দ করত। ঘরে নতুন ধান আসার পর তা মাড়িয়ে যে চাল হত ঢেকিতে পিশে তাকে গুড়ি করা হত। সেই গুড়ি দিয়ে ভাপা চিতই, পুয়া, নারকেলের পুলি সহ হরেক রকম পিঠা তৈরি হত। নুহাশ, পুয়া পিঠা আর রিক্তা পুলি পিঠা খেতে পছন্দ করত। হঠাৎ ‘মা ডাকে চমকে ওঠে কল্পনার ঘোরে থাকা রাহেলা বেগম। মাকে চমকে দিতে নুহাশ ও রিক্তা আজই চলে এসেছে। ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরে রাহেলার সে কি খুশির কান্না। নুহাশ মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে এবারের শীতে কী কী খাবে তার একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা জানায়। তার মা বলেন, সব হবে বাবা, পিঠা, পুলি, ছোট মাছ, খেজুরের রস সবই তোদের জন্য রেখেছি। তোরা না। এলে পুরা শীতটাই যে আমার জন্য বিষাদে পরিণত হয়।'
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post