একটি দুঃখের অভিজ্ঞতা

একটি দুঃখের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।



স্কুলে ডানপিটে বাঁদর হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলাম। ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে নিয়ে বিব্রত থাকতো। ভয় তেমন কাউকে পেতাম না। শুধু বসির স্যারকে ছাড়া, তিনি আমাদের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। তার রাশভারী এবং গম্ভীর কণ্ঠই মনে হয় ভয়ের প্রধান কারণ ছিল। অথচ তিনি কোন ছাত্রকে শাস্তি হিসেবে বেত মারেননি কোনদিন। শুধু সবার মধ্যে দাঁড় করিয়ে কয়েকটা নীতি কথা শুনিয়ে বলতেন, বিকালে আমার সঙ্গে দেখা করিস। অর্থাৎ ইংরেজি গ্রামারে একটি অংশ বা রচনা সেদিন মুখস্ত করিয়ে হোক আর বুঝিয়েই হোক তবে ছাড়তেন, যা আমার জন্য ছিলো সবচেয়ে ভয়ের। এসব নব্বইয়ের দশকের কথা। বাবার চাকরির জন্য তারপর থেকে এলাকা ছেড়ে বাইরে বের হওয়া। প্রায় দশ বারো বছর পর বেড়াতে গেলাম নিজের গ্রামে। স্টেশনে গাড়ি থেকে নেমে বেবিট্যাক্সিতে উঠতে যাব, হঠাৎ পেছনদিকে একটা লোক বলে উঠলো, "বাবু ৫টা টাকা দিবেন চাকরি পেলে দিয়ে দেব!" পিছনে তাকিয়ে দেখি বেশ বলিষ্ঠ চেহারার একটা অপ্রকৃতস্থ লোক, মুখে অপরিচ্ছন্ন দাড়ি, লম্বা চুল, ময়লা জামা-প্যান্ট পরা। আমি দশ টাকার একটা নোট নিয়ে চলা শুরু করলে তিনি বলে উঠলেন, "এক্সকিউজ মি, ৫ টাকা নিয়ে যান।" এবার তাকে চিনতে পারলাম, আমাদের বশির স্যার। ৫ টাকা আমাকে ফেরত নিতেই হলো এবং শুনলাম, এর কম বা বেশি তিনি না। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী-পুত্র মারা গেলে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং চাকরি হারিয়ে এখন পথে পথে ঘুরে ওই কথাটি বলে ভিক্ষা করেন- "পাঁচ টাকা হবে? চাকরি পেলে দিয়ে দেব!"
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post