ভাবসম্প্রসারণ : রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে / মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে, হারা শশীর হারা হাসি, অন্ধকারেই ফিরে আসে

রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে

কথায় আছে, “জীবন একটি দুঃখ-সুখের গান”- বাস্তবতা তাই। জীবনের পরতে পরতে হাসি-আনন্দ, দুঃখ-কষ্ট মিলেমিশে থাকে। দুঃখ-কষ্টের নির্মম কশাঘাতে জীবন হয়ে ওঠে সূচিশুভ্র। রাতের শেষে সকালের সোনা রোদ, মেঘের আড়ালে যেমন সূর্য; দুঃখ অবসানে তেমন সুখ বিরাজমান।

ইংরেজিতে একটি কথা আছে, “Adversity often leads to prosperity” অর্থাৎ “দুঃখের পরিণতি সুখে”। মানবজীবন দুঃখ-সুখের জীবন। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ সবই জীবনের অনুষঙ্গ; একটি গাঁথা কাব্য। একটি ছাড়া অন্যটি অর্থহীন। জীবনের পথে চলতে হলে বাধা আসবে, আসবে কন্টকাকীর্ণ পথ, কিন্তু তা দেখে ঘাবড়ে গেলে চলবে না। এগিয়ে যেতে হবে সম্মুখ পানে। মানবজীবনে নিরবচ্ছিন্ন সুখ কিংবা অহর্নিশ কষ্ট চলতে থাকলে জীবন অর্থহীন হয়ে যেত। দিন শেষে যেমন আঁধারে ঢেকে যায় পৃথিবী আবার সে তমিশ্রার আঁধার কাটতে থাকে মুহূর্তে মুহূর্তে- উদিত হয় আকাশে ঊষা, নদীতে জোয়ার আসে দু’কূল ছাপিয়ে; জোয়ারে শেষ হতে থাকে তার অর্থ ভাটা শুরু হতে থাকে। আকাশে মেঘ জমে তার আড়াল থেকে ’সূর্য্যি মামা’ হাসতে থাকে। জীবনও এমনি এক খেলা। যেখানে সুখের পরে দুঃখ কিংবা কষ্টের পরে সুখের অবারিত হাতছানি। সুখ-দুঃখ পর্যায়ক্রমে আসে। দুঃখের কালছোবল ফণা তুলে আঘাত করে তার বিষবাষ্পে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে কিন্তু মানুষকে ভুলে গেলে চলবে না যে দুঃখেরও শেষ আছে। ধৈর্য দিয়ে সহ্য করলে দুঃখের শেষ সুনিশ্চিত।

দুঃখ-কষ্টের তীব্রতা মানুষকে নিরাশ করে তোলে। কষ্টের সাগরে মানুষকে ভুলে গেলে চলবে না যে, দুঃখ যত তীব্রই হোক না কেন তার পরেই সুখ, সুখের সূর্য হাতছানি দিয়ে ডাকে তাকে। প্রতি মুহূর্তে যেমন রাতের গভীরতাকে আরও গভীর করে তেমনি করে রাতের আয়ু এক এক মুহূর্ত করে কমতে থাকে। সহজ কথায়, রাতের গভীরতা যতই বাড়ে প্রভাত ততই নিকটবর্তী হয়। মেঘের আড়ালে যেমন সূর্য হাসে তেমনি মানবজীবনের দুঃখ-কষ্ট। দুঃখ-কষ্টের আড়ালেই অপেক্ষা করে দিগন্ত জোড়া ভোরের সূর্য-সুখ। সুখের পায়রা উড়তে চায় নীল আকাশে। একটু ধৈর্য ধরে, বুকে সাহস সঞ্চার করে আপন কর্ম করে গেলেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। দুঃখের দিনে ধৈর্যহারা হলে চলবে না। আশায় বুক বাঁধতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে সুখের সোনালি দিনের। দুঃখের অমানিশার সমাপ্তি এক দিন ঘটবেই। অতএব আমাদের উচিত বিপদে ধৈর্যহারা না হওয় কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করা।

উত্থান-পতনের আবর্তে মানবজীবন গতিশীল। সুখদুঃখ এখানে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। জীবনে দুঃখ-কষ্ট আসতেই পারে- তখন হতাশ না হয়ে ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করলেই আবার সুখের সোনালী দিনের দেখা পাওয়া যাবে। কারণ, সকল আঁধার রাতের সমাপ্তি হয় ঊষার আকাশের রক্তিম বর্ণভার আভাসে।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : মানুষের জীবনে আলো ও অন্ধকার, সুখ ও দুঃখ পালাক্রমে আসে। এ সবের কোনো একটি জগতের একমাত্র সত্য নয়। মানব জীবন আলো-আঁধার, দিন-রাত, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি বিচিত্র ও বিপরীত অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ।

সম্প্রসারিত ভাব : জীবনের বৈশিষ্ট্যই এ। দিনের পর আসে রাত, রাতের পরে দিন। আলোর পরে অন্ধকার, অন্ধকারের পরে আলো। এমনিভাবে মানুষের জীবন চক্রে সুখ ও দুঃখের অভিজ্ঞতাও পালাক্রমে আসে। একটানা দুঃখের ভোগান্তি যেমন কাউকে সহ্য করতে হয় না তেমনি একটানা সুখও কেউ পায় না। সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা ইত্যাদির পালাবদলের মধ্য দিয়েই মানুষের জীবনচক্র পূর্ণ হয়। পর্যায়ক্রমে সুখ-দুঃখের দোলা লাগে বলেই জীবন হয়ে ওঠে উপভোগ্য। তা না হলে একটানা দুঃখ মানুষের জীবনকে করে তুলত দুর্বিষহ একটানা সুখ এনে দিত বৈচিত্র্যহীন একঘেয়েমি। আমরা অনেক সময় বিশ্বজগতের এক অমোঘ সত্যকে ভুলে যাই। দুঃখের আঁধার জীবনকে গ্রাস করলে হতাশায় আমরা ভেঙে পড়ি। কিন্তু মনে রাখা দরকার, দুঃখ কখনো চিরন্তর নয়। এক সময় না এক সময় দুঃখের রাতের অবসান হয়। আসে আশা ও আশ্বাসের সকাল। দুর্যোগ ও দুঃখের রাত যত গভীর হয় ততই আসন্ন হয়ে ওঠে সৌভাগ্য ও সুখের প্রসন্নদিন।

তাই আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে দুঃখে ও বিপদে। প্রতিকূল মুহূর্তে হতাশায় ভেঙে না পড়ে ধৈর্য ধরে জয় করতে হবে প্রতিকূলতাকে। দুর্যোগকে মোকাবেলা করতে পারলেই তার আড়াল থেকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে জ্যোতির্ময় দিন।

দুঃখ-কষ্ট, বাধা-বিপত্তি মানুষের জীবনে সাময়িক। তা দেখে বেদনায় ভেঙ্গে পড়া উচিৎ নয়।


2 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post