শীতের কোনো এক সকালের অভিজ্ঞতা

শীতের কোনো এক সকালের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।

গ্রামের ছেলে হলেও শহরে থেকে অনেকটা খোলস পাল্টে পুরোদস্তুর শহুরে বনে গেছি। কিন্তু মাটির টান, তাকে অস্বীকার করি কী করে! তাই মাঝে মাঝে ছুটে যাই সেই হিমালয়ের কোলঘেঁষা পঞ্চগড়ের রানীশংকৈলে।

অনেক দিন পর এবার শীতের মাঝামাঝি হঠাৎ করেই বলতে গেলে খেয়ালবশতই গ্রামে যাই। বাড়ি ছেড়েছি সেউ উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর। কেমন যেন অচেনা হয়ে গেছে আপন গ্রামখানি সেদিন অভ্যাসমতো বেশ ভোরেই ঘুম ভাঙ্গে। তীব্র শীত সত্ত্বেও ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। ভোরের কুয়াশা তখনও সমগ্র প্রকৃতিতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে।

গ্রামের মেঠোপথে ধরে আস্তে আস্তে হাঁটছি। উত্তরা বাতাসে মনে হলো হিমালয়ের বরফপুঞ্জকে উড়িয়ে এনে বাংলার প্রকৃতির মজ্জায় কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছিল। আমিও সমানতলে কাঁপছিলাম। কিন্তু এক অনির্বচনীয় ভালো লাগে ও শিহরণ আমার সমস্ত সত্তায় প্রবাহিত হচ্ছিল। পাতা ঝরা শিশিরের টুপটাপ শব্দ এবং পাখির কূজন ছাড়া সমস্ত প্রকৃতিতে তখন ছিল আশ্চর্য নীরবতা। সময় যাচ্ছিল আর কুয়াশার ঘনত্ব বেড়েই চলছিল। ৫০ হাত দূরের বস্তুও দেখা যাচ্ছিল না, এমন অবস্থা হঠাৎ গামছায় মুখ মাথা জড়িয়ে কে একজন এগিয়ে আসছে। আমায় দেখে সে থমকে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, 'কেমন আছ বাজান, অনেক দিন পর অইলা।' চিনতে পারলাম আমাদের গ্রামের জমির চাচা। নামকরা 'গাছি'। তার হাতের খেজুর রস এবং গুড় এলাকা বিখ্যাত। জমির চাচার সঙ্গে গিয়ে সদ্য পাড়া খেজুর রস খেলাম সেদিন এবং ফিরে গিয়েছিলাম ফেলে আসা শৈশবে। সেখান থেকে গেলাম সরিষা খেতে। হলুদের বন্যা তখন মাঠজুড়ে। ক্রমে সূর্য উঠছিল এবং কুয়াশা কেটে যাচ্ছিল। মনে হলো, সমগ্র প্রকৃতিতে রুক্ষতার মাঝেও নবজীবনে প্রবেশ করার প্রস্তুতি চলছে। শিশিরভেজা মাঠ পেরিয়ে যতক্ষণে আমি বাড়ির পথ ধরলাম ততক্ষণে গ্রাম্য জীবনের কর্মচঞ্চলতা শুরু হয়ে গেছে। কেউ লাঙল গরু নিয়ে খেতে চলেছে, কেউ বীজতলার দিকে যাচ্ছে। খুবই সাধারণ অথচ নিগূঢ় বৈচিত্র্য নিয়ে তারা জীবন অতিবাহিত করছে যা আমাদের নাগরিক জীবনে খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনই এক শীতের সকালের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে সেবার ঢাকা ফিয়েছিলাম।
إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم