খুদে গল্প : অন্যের জন্য আত্মত্যাগ

''অন্যের জন্য আত্মত্যাগ" শিরোনাম একটি খুদে গল্প রচনা করো।

অন্যের জন্য আত্মত্যাগ 

আমি বরাবরই গ্রামের মানুষ। কলেজে উঠে প্রথম শহরে এসেছি। প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও পরে দেখলাম, শহরের মানুষের জীবন একেবারেই রুটিনে বাঁধা। সময় জিনিসটা প্রায় কারোই নেই। সবাই এত ব্যস্ত যে, একের মুখের দিকে অন্যের তাকানোর সময় নেই। গ্রামে এরকম ছিল না। সেখানে সবার বিপদে সবাই এগিয়ে আসত। এরকম একটি ঘটনাই বলব। ঘটনাটি বেশ কিছুকাল আগের। আমার বয়স তখন বড়জোর ৯ বা ১০। হয়ত সবটা স্মৃতিতে নেইও। কিন্তু যতটুকু আছে তাকেও কম বলা যায় না। চৈত্র মাস চলছিল তখন। চারদিকে রোদের প্রখর তাপ। মানুষসহ সব প্রাণী তৃষ্ণার্ত কিন্তু জলও শুকিয়ে আসছে। তাই মরুভূমির মতো একটা ভাব দেখা যাচ্ছে চারদিকে। এমন দিনে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই রান্নার আগুন খুব সাবধানে জ্বালানো হয়। কারণ এমন দিনে আগুন ছড়ালে চারিদিকের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু সব সাবধানতার পরও সেবার আগুন ছড়িয়ে পড়ল গ্রামে। একটি একটি করে বাড়ি পুড়িয়ে আগুন ধেই ধেই বেড়ে চলল। যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলতে থাকল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। এর মধ্যে দিনমজুর রমিজের বাড়ির কাছাকাছি আগুন গেলে তাড়াহুড়ো করে তারা বেড়িয়ে আসে। অনেকক্ষণ পর রমিজের স্ত্রীর খেয়াল হলো ছোট ছেলেটি আটকা পড়েছে। কিন্তু ততক্ষণে তার বাড়িতে আগুন লেগে গেছে। ছোট ছেলেটি মা মা বলে বাড়ির ভেতর থেকে সমস্বরে চিৎকার করছে। কিন্তু বাইরের কেউই ছেলেটিকে বাঁচানোর সাহস করছে না। এমন সময় সাকিব ভাই কোথা থেকে দৌড়ে এসে বাড়িটার সামনে দাঁড়াল। শব্দ শুনে বলতে থাকে ‘বাড়ির ভেতরে তো মানুষ আছে, আপনারা কেউ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন না কেন?’ তিনি বুঝলেন সবাই নিজের প্রাণ বাঁচানো নিয়ে ব্যস্ত। এরপর তিনি সবার দিকে একবার তাকালেন, তারপর এক দৌড়ে ঢুকে গেলেন আগুনের কুণ্ডলীর মধ্যে। সাবিক ভাইয়ের সাহস সম্পর্কে আমরা সবাই জানতাম। এর আগেও তিনি প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অনেকের জীবন রক্ষা করেছেন। এবারো তিনি একই কাজ করলেন। কিন্তু ঝুঁকিটা তিনি একটু বেশিই নিয়ে ফেলেছিলেন। ছেলেটিকে তিনি জীবন্ত বের করলেন ঠিকই কিন্তু ততক্ষণে তিনি অনেকটা পুড়ে গেছেন। সঙ্গে সঙ্গে ভ্যানে করে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিল। এখানে বলে রাখা ভালো, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো বার্ন ইউনিট নেই। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিল সবাই। তার আর্তনাদ আর চিৎকারে ভরে উঠল যাত্রাপথ। মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হলো সাকিব ভাইকে। তিনি তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়লেন। তারপর চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এভাবেই অন্যের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করলেন আমাদের প্রিয় সাকিব ভাই।
إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم