মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লেখ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবময় সাহসী এক অধ্যায় এদেশের মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিজয় ছিনিয়ে আনে। সেসব সংগ্রামের সাহসী কাহিনি, তথ্যচিত্র, আলোকচিত্র এবং ইতিহাসের নানান স্মারকের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আট জন ট্রাস্টির উদ্যোগে ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকাস্থ সেগুনবাগিচার একটি বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দ্বার উন্মুক্ত হয়। এই জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ আমার একদিন এসেছিল।

আমরা ক'জন সকাল ৯টার মধ্যে জাদুঘরে পৌঁছলাম। জাদুঘর ভবনের প্রবেশ মুখে ছোট প্রাঙ্গণে দেখলাম শহীদ ড.মোহাম্মদ ফজলে রাব্বির ব্যবহৃত একটি গাড়ি।

জাদুঘর ভবনটি তিনতলা। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় প্রদর্শনী চলে। নিচতলার প্রথম কক্ষে রয়েছে দুটি গ্যালারি। ১ম গ্যালারিতে রয়েছে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য ও জনপদের বিভিন্ন শিল্পকর্মের নির্দশন। ২নং গ্যালারিতে রয়েছে ঔপনিবেশিক শাসন শোষণের বিভিন্ন তথ্য ও চিত্র। দ্বিতীয় কক্ষে রয়েছে পাকিস্তানের জন্ম ইতিহাসের ছবি। নিচতলায় তৃতীয় কক্ষে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কর্মকান্ড ও ইতিহাস। চতুর্থ কক্ষে ১৯৪৮-৫২, '৬৮, '৬৯ এবং '৭০ এ ঘটে যাওয়া আন্দোলন ও কর্মসূচিত প্রদর্শিত ছবি। ৫ম কক্ষে রয়েছে ২৫ মার্চের গণহত্যার চিত্র, বাংলার গর্জে ওঠার চিত্র, ভারতের শরণার্থী শিবিরের মানবেতর জীবনচিত্র।

এরপর গেলান ভবনের দ্বিতীয় তলায়। এ তলার প্রথম কক্ষে দেখলাম শহীদদের ব্যবহার করা ব্রিফকেস, চশমা, কলম, হাতঘড়ি, মানিব্যাগ ইত্যাদি। দ্বিতীয় কক্ষে আছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, নৌকমান্ডারদের ছবি ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র। ৩য় কক্ষে যুদ্ধকালীন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও ছবি। দ্বিতীয় তলার ৪র্থ কক্ষে বিভিন্ন বধ্যভূমি থেকে উদ্ধারকৃত শহীদদের ব্যবহৃত সামগ্রী, মাথার খুলি, হাড় ইত্যাদি।

ভবনের নিচতলায় রয়েছে জাদুঘরের নিজস্ব লাইব্রেরি। প্রতি বছরই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নতুন প্রকাশিত বই এখানে সংগ্রহ করা হয়। জাদুঘরে একটি অডিটোরিয়ামও রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন প্রকার সভা ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি, নিদর্শন দেখে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় আমার মন ভরে উঠল। আমি মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী চেতনায় চেতনাদীপ্ত হলাম।
إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم