মার্চের দিনগুলি

খুদে গল্প : কেউই সম্পূর্ণ নয়

"কেউই সম্পূর্ণ নয়" শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।

কেউই সম্পূর্ণ নয়

বিষ্ণুপুরে রামাই পণ্ডিতের খ্যাতি সবচেয়ে বেশি। তার মতো পাণ্ডিত্য এ অঞ্চলে প্রায় কারোরই নেই। সবাই তাঁকে বেশ শ্রদ্ধাভক্তি করে। তবে তিনি মোটেও বিনয়ী নন। মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলেন না। ছোটখাটো কারণেও সবাইকে মূর্খ বলে গালমন্দ করেন। লোকজন তাঁর কথায় কষ্ট পায় কিন্তু কিছু বলে না। একদিন নদীর ওপারের এক গ্রাম থেকে তাঁর কাছে একটি নিমন্ত্রণপত্র আসে ৷ তিনি তাতে সম্মতি জানিয়ে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়েন নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য। অনেকটা পথ হেঁটে তিনি নদীর সামনে এসে দাঁড়ান। কাউকে না দেখে হাঁক-ডাক দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাঁকে দেখে এক মাঝি নৌকা নিয়ে এগিয়ে আসে। নৌকায় বেশ আয়েস করে চড়ে বসেন রামাই পণ্ডিত। কিছুদূর গিয়ে তিনি তাঁর হাতের পুঁথিটি খুলে দেখতে থাকেন। আরও খানিকটা গিয়ে তিনি মাঝির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। মাঝির সাধারণ পরিচয় জেনে তিনি মাঝিকে প্রথমে ব্যাকরণ নিয়ে প্রশ্ন করেন। উত্তরে মাঝি নিশ্চুপ থাকেন। তারপর পৃথিবীর আকার নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন। কিন্তু মাঝি তার অজ্ঞতা প্রকাশ করে, কোনো সদুত্তর দিতে পারে না। এরপর পণ্ডিত তাকে আকাশের আকার নিয়ে প্রশ্ন করেন। কিন্তু এবারো মাঝিকে নিচুপ থাকতে হয়। অতঃপর তাকে চন্দ্র ও সূর্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু মাঝি তারও কোনো উত্তর করতে পারে না। এসব বিষয় লক্ষ করে পণ্ডিত অত্যন্ত বিরক্ত হন। তারপর নিজেই নিজের করা প্রশ্নগুলোর উত্তর করতে থাকেন। কিন্তু মাঝির মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই। সে আগের মতোই পণ্ডিতের দিকে তাকিয়ে থাকে। পণ্ডিত তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করলে সে নিশ্চুপভাবে বসে থাকে। অবশেষে পণ্ডিতের সমস্ত ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। তিনি ভীষণ বিরক্তি নিয়ে মাঝিকে মূর্খ বলে সম্বোধন করেন। মাঝি অশিক্ষিত গোবেচারা মানুষ। এ তিরস্কার সহ্য করেও সে পণ্ডিতকে নিয়ে তাঁর গন্তব্যের পথে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু পণ্ডিতের গায়ের জ্বালা তখনো জুড়োয়নি। এবারে তিনি মাঝিকে বলেন, “শিক্ষা ছাড়া তোমার জীবনের আট আনাই বৃথা।' মাঝি তখনো নিশ্চুপ থাকে। এরমধ্যে সূর্য পশ্চিমদিকে হেলতে শুরু করে। পাখিরা দলবেঁধে ঘরে ফিরে যাচ্ছে। রাখাল বালক গরু নিয়ে ফিরে যাচ্ছে গৃহে। হঠাৎই আকাশ কালো হয়ে আসতে থাকে। নদীর জলও কেমন কালো হয়ে ওঠে। আতঙ্কে মাঝির চোখ-মুখ শুকিয়ে আসে। পণ্ডিত তখনও নির্বিকার, তিনি পরিস্থিতি দেখতে থাকেন। বেশ খানিক পরে বাতাস জোরে বইতে শুরু করে। মাঝি আসন্ন বিপদ টের পায়৷ সে তারপরও নৌকা চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু মাঝ নদীতে নৌকা পৌঁছামাত্র ঝড় তীব্র আকার ধারণ করে। এবার নৌকাডুবি আসন্ন জেনে মাঝি প্রস্তুতি নিতে থাকে। পণ্ডিতের দিকে তাকিয়ে সে এবার প্রশ্ন করে, 'বাবু মশাই আপনি কি সাঁতার জানেন?' পণ্ডিত সাঁতার জানতেন না। কাজেই তিনি নেতিবাচক উত্তর দেন। তখন মাঝি তাঁকে বলে, 'আপনার কোনো জ্ঞানই আর কাজে লাগবে না বাবু মশাই৷ কারণ আপনি এখন ডুবে মরবেন। আহারে! আপনার জীবনের ষোল আনাই দেখি বৃথা।'
إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم