মার্চের দিনগুলি

কান্তজির মন্দির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা

কান্তজির মন্দির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।



দিনাজপুর শহর থেকে পঞ্চগড় তেতুলিয়া সড়কে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরত্বে কান্তজির মন্দির অবস্থান। সকাল আটটার মধ্যেই আমরা সুন্দরপুর ইউনিয়নের কান্তনগরে উপস্থিত হলাম। দিনাজপুর তেতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে কান্তনগরে যাওয়ার পথে পড়ে শীর্ণ নদী, নাম তার ঢেপা। ক্ষ্যাপা নদীর তীর ঘেঁষে দুটি স্থাপনা চোখে পরলো। একটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া মন্দিরের কাঠামো, অন্যটি উঁচু একটি মাটির প্রাচীর। কান্তনগর এ অবস্থিত কান্তজীর মন্দিরটি ‘নবরত্ন মন্দির’ নামেও পরিচিত। কারণ তিনতলায় মন্দিরের নয়টি চূড়া বা রত্ন ছিল। তবে কান্তজির মন্দির বিখ্যাত হয়েছে মন্দিরের অপরূপ টেরাকোটার কাজের জন্য। মন্দিরের দেয়ালের পোড়ামাটির ফলক গুলোকে টেরাকোটা বলে। টেরাকোটার কাজ বর্তমানে আমাদের দেশে খুবই দুর্লভ। মন্দিরটি যে ভিত্তি বেদির উপর অবস্থিত সেটি পাথরের তৈরি এবং ভূমি থেকে প্রায় ১ মিটার উঁচু। বেদিটি বর্গাকার। আর এই বেদির উপরের মন্দিরটিও বর্গাকার। সবদিকে মন্দির গৃহটি টানা বারান্দা দিয়ে ঘেরা। সবদিকের বারান্দাতেই আছে দুটি করে স্তম্ভ তিনটি করে প্রবেশ পথ।

মন্দিরটি প্রথম তলার ছাদে চার কোণায় চারটি, দ্বিতীয় তলায় চার কোণায় চারটি এবং তৃতীয় তলার কেন্দ্রভাগে একটি চূড়া ছিল। এভাবে সব মিলিয়ে মোট নয়টি চূড়া থাকায় এমন দিকটি হলো একটি নবরত্ন মন্দির। রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনী ও মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের বহু ঘটনায় ফুটে উঠেছে এই মন্দিরের দেয়ালে দেয়ালে। পুতুল এই মন্দিরের টেরাকোটা শিল্পের এক বিশেষ দিক এর প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। সেটি হচ্ছে এটি একটি ধর্ম মন্দির হলেও ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন বহু কিছুই, বিশেষ করে সমকালীন রাজনৈতিক বিষয়ে ফুটে উঠেছে এর দেয়ালের টেরাকোটার ফলক চিত্রে। যে যুগে মন্দির নির্মিত হয়েছিল সে যুগে বাংলাদেশের বর্গী আর পর্তুগিজ জলদস্যুদের হামলা হত প্রায়। মন্দিরের দেয়ালের সাঁটা ফলকে উৎকীর্ণ আছে পুতগীজ সেনা বোঝাই জাহাজের ছবি। তৎকালীন নবাব আমির-ওমরাহদের মজলিস পোশাক-পরিচ্ছদের নানা ঢংয়ের ছবি। মন্দিরের উত্তর দিকে ভিত্তি বেদির শিলালিপি থেকে জানা যায়, দিনাজপুর রাজা বংশের রাজা প্রাণনাথ শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে ১৭২২ সালে রুক্মিণী কান্ত মন্দির মন্দিরের কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার পোষ্যপুত্র মহারাজা ১৭৫২ সালে মন্দির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ সালে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে চুড়া গুলো ভেঙে যায়। পোড়ামাটির ফলক কান্তজীর মন্দির বাংলাদেশের পুরনো স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন। ফিরতি পথে বারবার মনে দোলা দিচ্ছিল স্থাপত্য, চিত্রকলা, সাহিত্য ও ইতিহাসের অনির্বচনীয় আনন্দ অনুভূতি।
إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم