রচনা : বিজয় দিবস - PDF

↬ জাতীয় জীবনে বিজয় দিবসের তাৎপর্য

↬ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম


ভূমিাক : বিজয় দিবস বাঙালির জাতীয় জীবনের এক আশ্চর্য অনুভূতিময় আনন্দ-বেদনার শিহরিত এক উজ্জ্বল দিন। বাংলাদেশের ইতিহাসের এ এক লাল তারিখ। মহান স্মৃতি-চিহ্নিত এ দিনটিতে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে মুক্তি সংগ্রামের বিজয়কে, স্বদেশভূমিতে আত্মপ্রতিষ্ঠা ঘটেছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জাতীয় জীবনের এক নবতর অধ্যায়। বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্জন করতে শুরু করে। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ স্থান হয় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে।

বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি : বাংলাদেশের বিজয় দিবসের পটভূমিতে রয়েছে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশের এক অগ্রগ্রামী অধ্যায়, রয়েছে পাকিস্তানের জঙ্গিশাহির দুই দশকের শাসন-শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে অগ্নিশপথময় আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস। সে ইতিহাসের পাতায় এক অনন্য মাইল ফলক- মহান ভাষা আন্দোলন। পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের মাধ্যমে উম্মেষ ঘটেছিল বাঙালির ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার।

এই চেতনার ধারাই ক্রমবিকশিত হয়েছে ১৯৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-র ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর ১১ দফা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে। এসব আন্দোলনের উত্তুঙ্গ প্রচণ্ডতার মুখে ঘটে যায় ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান। স্বাধিকার চেতনা ক্রমেই রূপ নেয় জাতীয় স্বাধীনতার আন্দোলনে। পাকিস্তানি সামরিক জঙ্গিমদমত্ত দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অদম্য প্রতিরোধে ফুঁসে উঠেছিল ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতি। স্বদেশমন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছিল পাকিস্তানি চক্রের ধর্মান্ধতার বেড়াজাল, অগ্নিশপথ নিয়েছিল স্বাধিকার অর্জনের, ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েচিল দুই দশকের দুঃশাসনের কেল্লাকে।

সামরিক জান্তা বাধ্য হয়ে নির্বাচন দিলে বাঙালি জাতি পূর্ব বাংলায় স্বাধিকারের পক্ষে রায় দেয় এবং আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকস্তানি শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৭১-এর মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে স্বাধিকার আন্দোলন চরম শক্তি অর্জন করে। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতা চেতনাকে নস্যাৎ করার হীন প্রয়াসে ৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক জল্লাদ ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী হিংস্র শ্বাপদের মতো তীক্ষ্ন নখদণ্ড বিস্তার করে অতর্কিতে হানা দিয়েছিল সুপ্তিমগ্ন জনপদে তার পর দীর্ঘ নয় মাস ধরে প্রতিটি দিন ও প্রতিটি রাতকে কলঙ্কিত করেছে পাকিস্তানি দখলদার জল্লাদ বাহিনী। নিরস্ত্র নারী-পুরুষের, শিশু-কিশোর-তরুণের, যুবা-বৃদ্ধের রক্তধারায় রঞ্জিত করেছে বাংলার শ্যামল মাটি আর নদীর স্বচ্ছ ধারাকে।

শত-সহস্র মা-বোনের ওপর চালিয়েছে পাশবিক নির্যাতন। অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজে তছনছ করেছে জনপদ। জল্লাদ বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডব থেকে প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়েছে কোটি কোটি নিঃসম্বল মানুষ। কিন্তু একাত্তরের সেই দিনগুলোতে কেবল বিপর্যয়কেই নিয়তি বলে মেনে নেয় নি নির্যাতিত বাংলাদেশ। জল্লাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল হাজার হাজার দেশপ্রেমিক। সমগ্র জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল প্রতিরোধ সংগ্রাম। ছাত্র-শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, ডাক্তার-প্রকৌশলী, কৃষক-শ্রমিক, নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান- সবাইকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল মুক্তিবাহিনী। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর কবল থেকে স্বদেশকে মুক্ত করার সংগ্রামে ব্রতী হয়েছিল বাঙালি সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল অস্ত্র হাতে উদ্ধত মুক্তিসেনা। দেশপ্রেমের পবিত্র চেতনায় উজ্জীবিত কৃষক-শ্রমিকের হীরক প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল বাঙালির আত্মপরিচয়ের বিজয় দিবস- সুসম্ভাবনায় উজ্জ্বল ও দুঃখস্মৃতিভারে আনত।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য : মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কেবল একটি জাতীয় পাতাকা এবং স্বাধীন ভূখণ্ডের মধ্যে সীমিত নয়, এর তাৎপর্য বিরাট ও সুধূরপ্রসারী। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মধ্য দিয়ে অবহেলিত পশ্চাদপদ শোষিত জাতি রচনা করেছিল অসামান্য সৌরভগাঁথা। বিশ্বের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ভিয়েতনামের পর আরেক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে জাতীয় জীবনে ঘটে গিয়েছিল নব জাগরণ, সৃষ্টি হয়েছিল অযুত সম্ভাবনার মুহূর্ত। স্বাধীনতার চেতনা রূপ পরিগ্রহ করেছিল জাতীয় চার মূলনীতিতে- গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের আদর্শে।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, পরবর্তী বাস্তবতা ও আমাদের প্রত্যাশা : শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলেও আমাদের স্বপ্ন সম্ভাবনা বাস্তবের আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হয়েছে। ১৯৭৫-এ ঘাতকের বুলেটে সপরিবারে জাতির জনকের মর্মান্তিক মুত্যুর মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয় রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ হয় পরিত্যক্ত। স্বাধীন দেশে গণতন্ত্র হয় নির্বাসিত। প্রায় দেড় দশক জুড়ে নতুন করে সংগ্রাম করতে হয়েছে গণতন্ত্রের জন্যে। আদর্শিকভাবে স্বাধীনতার মূল চেতনার অনেক কিছুই এখন অধরা। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে এখনও পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন এখনও স্বপ্ন মাত্র। জাতীয় জীবনে ঐক্যের বদলে সংঘাত, সুস্থিতির বদলে অস্থিরতা, শান্তির বদলে নৈরাজ্য মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

কিন্তু এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একুশ শতকে পদাপর্ণের মুহুর্তে বাংলাদেশের কিছু অগ্রগতিও আছে। দেশের অর্ধেকেরও বেশি লোক দারিদ্রসীমার উপরে উঠতে পেরেছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। বৃষিক্ষেত্রে প্রাণের সাড়া জেগেছে। গ্রামীণ নারীসমাজ জাগতে শুরু করেছে। শিক্ষার হার বেড়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটছে। বিদেশী বিনিয়োগও বাড়ছে।

উপসংহার : শ্রেয়োবোধ ও শুভবুদ্ধিকে আশ্রয় করে আমরা প্রতিকূল ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম। প্রতিটি বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মশাল করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে হতাশা ও নিরাশ্বাস ঠেলে, প্রত্যয়ে ও সাহসে বুক বেঁধে। পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ না করে প্রগতি ও পরিবর্তনের ধারায় অগ্রসর হতে পারলে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা আমাদের জীবনে অর্থবহ হয়ে উঠবে।



আরো দেখুন :
রচনা : বিজয় দিবস (প্রতিযোগিতার উপযোগী)

12 تعليقات

  1. So sorry,bhaia.But I don't have any fb account.But I really 👍 ur posts..✌😉

    ردحذف
  2. একটাও উক্তি নাই কেন?

    ردحذف
  3. উক্তি নেই কেন?

    ردحذف
  4. please increase the points.😀

    ردحذف
  5. বিজয় দিবসে আমার করণীয় এই পেড়া তারিখ একটু পোস্ট করবেন

    ردحذف
  6. bijoy dibosher utshob rochona lagto argent jdi diten khub valo hoto
    porshu din ki paoa jabe plz

    ردحذف
  7. এটা ১০০০ শব্দের না

    ردحذف
  8. Sir, apni besh bhalo likhechen. Tobe BONGOBONDHUR CHOKHE SHOPNER BANGLADESH ai point ti thakle aro shokto rochona hoto.
    THANKS!!!

    ردحذف
إرسال تعليق
أحدث أقدم